আকিমুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা থেকে :
সখের বসে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মানিক রতন।
এখন তার মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার মাঝে গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপি শোভা পাচ্ছে।
দূর থেকে বোঝা না গেলেও কাছ থেকে কপির এমন ভিন্ন রঙ মুগ্ধ করবে। জেলায় সাদা রঙের কপি নিয়মিত চাষ হলেও এ বছর প্রথম রঙিন কপি চাষ হচ্ছে।
খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি। রঙিন কপির চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আস ছেন এ কপি দেখতে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা উচ্চ মূ ল্যের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ দেঝাছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের হুচুক পাড়ার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মানিক রতন।
১০ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর  সংসারের হাল ধরতে পড়াশুনার পাশাপাশি কৃষি কাজ শুরু করেন।
বাবার রেখে যাওয়া মাঠের কৃষি জমিতে বছর জুড়ে সবজি ও ধানসহ অন্য ফসল চাষ করেন। নতুন নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
কারণ বিদেশি জাতের ফসল চাষ লাভজনক ও খরচ তুলনা মূলক কম। আর বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকে। ইউটিউবে দেশি ও বিদেশি ফসল চাষ দেখেন। পছন্দের চাষ দেখলেই আগ্রহী হয়ে উঠেন। বীজ অথবা চারা পেলেই চাষ শুরু করে ন।
মানিক রতন জানান, ইউটিউব দেখে এ বছর রঙিন ফুল কপি চাষে আগ্রহী হন তিনি। রঙিন ফুলকপির বীজ দেশের বাজারে না পেয়ে ভারতে ছুটে যান।
কিছু দিন অবস্থান করেন বীজের জন্য। সেখানে বীজ পেতে দেরি হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন।
গ্রামের সার, বীজ ও কীটনাশকের একটি দোকানে রঙিন কপির বীজের কথা বলে রাখেন। ভাগ্য ভাল হওয়ায় ওই দোকানি সংবাদ দেন অল্প পরিমাণে বীজ পাওয়া যাবে।
তাতেই তিনি রাজি হয়ে যান। সিনজেনটা কোম্পানির প্রতিনি ধির মাধ্যমে রঙিন ক্যারেনটিনা ও ভেলেনটিনা জাতের ২০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করেন তিনি।
মানিক আরও জানান, ভেলেনটিনা বেগুনি ও ক্যারেনটিনা হলুদ জাতের। চারা তৈরির জন্য বীজতলায় রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ২৫-৩০ দিনের মধ্য চারা লাগা নোর উপযুক্ত হয়।
এরপর বীজতলা থেকে চারাগুলো সংগ্রহ করে জমিতে আবাদের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সার, কীটনাশক ও সেচসহ সব ধরনের পরিচর্যা করতে হয়।
গাছ বড় হওয়ার পর ছোট ছোট গুটি বাধতে শুরু করে। তারপর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্য কপি বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।
রঙিন ফুলকপি চাষে ১৫ কাঠা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
প্রতিটি গাছেই ছোট বড় কপি রয়েছে। কপির ওজন ১ কেজি থেকে প্রায় দেড় কেজি পর্যন্ত। সবুজ পাতার মাঝে পূর্ণতা পেয়েছে গোলাপি ও হলুদ ফুলকপি।
প্রতি কেজি কপি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। দেশের বাজারে রঙিন কপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে ২০০-২৫০টি পরিপক্ব কপি বিক্রির জন্য নেয়া হচ্ছে। মানিক রতন ১৫ কাঠা জমিতে প্রায় ৩৫০০ হলুদ ও বেগুনি জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক রহিম সরদার জানান, হাটে সবজি বিক্রি করে গ্রামের ভেতর দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ হলুদ ও গোলাপি রঙের কপি দেখা ক্ষেতের সামনে দাঁড়াই।
রঙিন কপি এর আগে কখনও দেখিনি।প্রতিদিন কপি দেখতে মানুষ ক্ষেতে ভিড় করছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিন্তে আজিজ জানান, চুয়াডাঙ্গার মাটি কৃষির জন্য উর্বর।
এখানে সব ফসল চাষ করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রঙিন কপির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে।
দাম ভাল পাচ্ছে। খরচ তুলনামূলক কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মানিককে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়।
জেলায় বড় পরিসরে এ কপি চাষ করতে কৃষকদের সব ধর নের সহযোগিতা দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *