মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ গত ৭জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে।

আর এই নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন সরকারি সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী।

যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের এবং প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল নির্বাচন কমিশন থেকে।

সেই অর্থ কোথাও বন্টন হয়েছে সঠিকভাবে আবার কোথাও
বন্টনে হয়েছে অনিয়ম।

যেন সরকারি টাকার হিসাব নেওয়ার কেউ নেই। এমনই ঘট না ঘটেছে নওগাঁর রাণীনগরে।

অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার উম্মে তাবাসসুম সরকারি নির্ধারিত কেন্দ্র খরচ দিতে গড়িমসি করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার
৫৪টি কেন্দ্রের ৩৬৫টি স্থায়ী বুথ আর ৬৯টি অস্থায়ী বুথের
মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচন কমিশনারের পক্ষথেকে ভোট গ্রহণের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য রশি ও অন্যান্য ষ্টেশনারী সরঞ্জাম কেনার জন্য ২হাজার টাকা অথবা এর অধিক টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া অস্থায়ী কক্ষের খরচের জন্যও আলাদা অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

সেখানে ৮টি বুথের নিচের নির্বাচনী কেন্দ্রের খরচ হিসেবে মাত্র ১হাজার টাকা, ৮টি বুথের উপরের কেন্দ্রে কাউকে দেড় হাজার আবার কাউকে ২হাজার টাকা খরচ হিসেবে অর্থ প্রদান করেন ইউএনও।

এছাড়া নিয়মানুসারে স্টেশনারী সামগ্রীগুলো স্ব স্ব কেন্দ্রের
প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা কিনে নেওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা নিজেই কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় স্টেশনারী সামগ্রী গুলো কিনেছেন বলে তাদেরকে জানান।

এদিকে নওগাঁ জেলার অন্যান্য উপজেলায় নির্বাচনী কেন্দ্র খরচ সঠিকভাবে বন্টন হলেও রাণীনগর উপজেলার অনি য়মের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন স্বেচ্ছাচারিতায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছিলো।

তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি উপজেলার উর্দ্ধতন কর্মক র্তা হওয়ায় অনেকে মুখ খুলতে ও সরাসরি নাম প্রকাশ কর তে অনিচ্ছুক।

কেউ প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে নারাজ বলে জানিয়েছেন
দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।

বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানলে পরবর্তিতে সম্প্রতি উপজেলার প্রিজাইডিং কর্মক র্তাদের ৫শত করে টাকা ফেরত দিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম।

আর ফেরত দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এই রকম ঘটনায় কেন্দ্রে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত্বে উপজেলার
অধিকাংশ প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে সেখানে এক অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।

কয়েক ঘন্টা পরও যখন ইউএনও বিষয়টির কোন সমাধান করেননি, তখন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বাধ্য হয়েই স্ব স্ব
ভোট কেন্দ্রে চলে যান।

এরপর ভোট সম্পন্ন করে উপজেলা পরিষদে আসলে ইউএনও সাদা কাগজে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর
নিয়ে সকল নির্বাচনী সরঞ্জাম গ্রহণ করেন।

এমনকি নির্বাচনী ফলাফল প্রদানের সময় ফলাফল কেন্দ্রে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট কারো জন্য কোনো নাস্তারও ব্যবস্থা ছিলো না।

তাই প্রশ্ন জেগেছে ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিনে কন্ট্রো লরুমের খরচের জন্য বরাদ্দকৃত ২লাখ ৯৩হাজার টাকা কোথায় হারিয়ে গেলো। সেই অর্থের হিসেব কে নিবে?

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট সকল
সরঞ্জাম পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও নির্বাচন
কর্মকর্তার সমন্বয়ে করতে হয়।

কিন্তু রাণীনগর উপজেলার চিত্র পুরোপুরি উল্টো। এখানে থানার ওসি ও নির্বাচন কর্মকর্তা কাউকেই অবগত করা হয়নি। সেখানে তার নির্দেশনায় সকল কিছু হয়েছে। তাই প্রতিটি কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ভাড়া হিসেবে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক ভাবে প্রদান নিয়েও সন্দিহান প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জেলা সদর উপজেলার হালঘোষপাড়া নির্বাচনী কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ওয়াহেদুল্লাহ জানান, তিনি নির্বাচনী কেন্দ্রের খরচ হিসেবে সম্পন্ন টাকা পেয়েছেন এবং নির্বাচন শেষে তার অধিনে থাকা সকল ব্যক্তিদেরও তিনি সঠিক হিসেবে প্রাপ্ততা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার একটি কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী মিজানুর রহমান জানান, আমরা তিনজন ছিলাম একটি কেন্দ্রের দায়িত্বে।

প্রিজাইডিং অফিসার পেয়েছে ৮হাজার, আমি পেয়েছি ৬হাজার ৪০০ এবং আরেক জন পোলিং অফিসার পেয়েছে ৪হাজার ৪০০ টাকা।

এছাড়া কেন্দ্র খরচ হিসেবে দুই হাজার ৯০টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়েই জানালেন যে, টাকা আমি ভাগ করে দিয়েছি। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই একই পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা। এছাড়া যানবাহন থানা থেকে ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেও জানান তিনি।

৪ হাজার ৪শত টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে একই উপজেলায় হাতুড় ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে পোলিং অফি সার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিকাশ জানান, আমার জানামতে সকলে সরকারি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পেয়েছে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন
মুঠোফোনে বলেন, নির্বাচনী দিনের জন্য খরচের অর্থের বরাদ্দ আসে জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কাছে। সেখান থেকে উপজেলা রিটানিং কর্মকর্তাদের নগদ অর্থ কিংবা চেকের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

তাই নির্বাচনী দিনের জন্য যানবাহনসহ অন্যান্য বরাদ্দকৃত খরচের অর্থের বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এগুলোর বিষয়ে আমাকে কোনো কিছু অবহিত করেন নাই।

তিনি সরাসরি না বললেও অন্যভা বে বললেন, ইউএনও একাই অন্য কারো সহযোগীতা নিয়ে নির্বাচনী খরচ করতে পারেন।

তারপরও যেহেতু এটা নির্বাচনীব্যয়, তাই সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসারকে অবগত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

একইভাবে বললেন রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ওবায়েদ।

তিনি জানালেন নির্বাচনের দিন যানবাহনের ভাড়ার বিষয়ে
আমাদের কোনো অবগত করা হয়নি। আমরা এবিষয়ে কিছু জানি না।

ইউএনও অফিস থেকে সবকিছু করা হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এস. রবিন শীষ জানা ন, ভোট গ্রহণের দিনের পুরো খরচের অর্থ তিনি প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের বরাদ্দ অনুসারে প্রকাশ্যে প্রদান করেছেন।

এছাড়া ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিদের প্রাপ্ততা সঠিক ভাবে বন্টন করেছেন বলেও তিনি জানান।

বুথ প্রতি প্রিজাইডিং অফিসারদের নির্বাচনী বরাদ্দের বিষয়ে
মুঠোফোনে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী
অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার উম্মে তাবাসসুম বলেন, অফিসে এসে দেখে যান।

এছাড়া অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করার আগেই আবারও অফিসের কথা বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

One thought on “নওগাঁয় নির্বাচনী কেন্দ্র খরচ প্রদানে ইউএনও’র নয়-ছয়ের অভিযোগ”
  1. নওগাঁয় নির্বাচনী কেন্দ্র খরচ প্রদানে ইউএনও’র নয়-ছয়ের অভিযোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *