রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদী ভরাট করে রিসোর্ট নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার মোহম্মদপুর ইউনিয়নে ফেরসাডাঙ্গী ঘাটে ব্রিজের নিচের অনেকটা অংশ ভরাট করে ‘শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেড’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রশাসন থেকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও চলমান রয়ে ছে নির্মাণ কাজ। জেলা প্রশাসক বরাবর কৃষকরা নির্মাণ কাজ বন্ধ ও নদী ভরাট না করার জন্য লিখিত অভিযোগও করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের নিচের নদীর অংশ ভরাট করা হচ্ছে।

নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করে এবং নদীকে সংকীর্ণ করে বাঁধ নির্মাণের জন্য ধার তৈরি করা হচ্ছে।

এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ আরও বাড়লে আশেপাশের কৃষি জমিগুলো নদীগর্ভে চলে যাবে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দ মুহাম্মদ আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি এ রিসোর্ট নির্মাণ করছেন। তিনি শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

নদীর পাশে তার নিজস্ব জমিও রয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে নভেম্বর ২০২৩ সালে নদী পরিমাপের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছিলেন তিনি।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান নদীর সীমানা নির্ধারণ ও সরকারি স্বার্থ রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করে দেন এবং প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। কিন্তু এ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই রিসোর্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন।

স্থানীয়দের দাবি, ব্যক্তি মালিকানার জমিতে কোনো ব্যক্তি প্রকল্প করতেই পারে। একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সমাজে এর ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।

কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এবং নদীর স্বার্থ রক্ষা না হলে স্থানীয় কৃষকদের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি সব নদীগর্ভে চলে যাবে।

স্থানীয় কৃষক হাসান আলী বলেন, নদীর ওপর রিসোর্ট হলে বন্যায় আমাদের সব জমি নদীতে ধসে যাবে।

যদি কোনো বিত্তবান রিসোর্ট করতে চান তাহলে যেন নদীর এলাকা পরিমাপ করে আগে বাঁধ নির্মাণ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাবি শিক্ষার্থী সুজন চৌধুরী বলেন, এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে এটা ভালো।

কিন্তু এখানকার গরীব মানুষদের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমির কথাও ভাবতে হবে। নদীর ওপর কীভাবে রিসোর্টের নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে আর প্রশাসন কেন নীরব থাকবে?

শ্বেতপদ্ম রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আলী হুসেন বলেন, আমরা নিজস্ব জমিতে রিসোর্ট নির্মাণ করছি।

নদী ও ব্রিজের যেন কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় সেদি কে আমরা খেয়াল রেখেই কাজ করছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, নদী পরিমাপের জন্য একটা কমিটি করেছে জেলা প্রশাসক।

এখনো নদী পরিমাপ করা হয়নি। তার আগেই কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ এটা অন্যায়।

উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, আমরা উক্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেছি।

পরিমাপের আগেই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কাজ চলমান রেখেছে। আমরা এখনো পরিমাপ করতে পারিনি। কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, রিসোর্ট নির্মাণের জন্য আবেদন পেয়েছি। সেই অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বয় করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু আবেদন দিয়েই নাকি মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজ চল ছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *