মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে নওগাঁর রাস্তায় নেমেছে এক শিক্ষার্থী। রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাকাল ব্যাপি শহ রের তাজের মোড় ও ব্রীজের মোড় সড়কে চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করে নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বি দ্যাল য়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া।

এসময় শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার হাতে থাকা পো ষ্টারে লিখা ছিল “সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই, দূর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই”।

এসময় স্থানীয় পথচারিরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
পথচারী জুলফিকার রহমার বলেন, আমরা সড়কে কেউ নিরাপদ নই। বাসা থেকে বের হলে সুস্থ্যভাবে নিরাপদে বাড়ি তে ফিরতে পারবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। এক ছোট্ট শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।

নিলুফার ইয়াসমিন, তানহা খাতুন নামের আরও দুই পথচারী বলেন, তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন প্রতি বাদ ও দাবী খুবই যোক্তিক। আমরা তার দাবীকে সমর্থন করছি।

তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে।

প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবীতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

শিুশ শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া জানায়, প্রতিদিন
টিভি-পত্রিকাতে দেখি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর।

তার অধিকাংশই সড়ক দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলেযাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে। বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় বাবা-মা।

আর বেঁচে যায় তাদের ৫বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির এখন কি হবে। সারা জীবনের জন্যশিশুটি বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল।

আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নি শ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইস লাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দূর্ঘটনায়।

পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিলো। এর আগে ১৭এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড় ক দূর্ঘট নায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের ৫বছরের শিশু জুনাইদ ইস লাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজে কে স্থির রাখতে পারছে না। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কার ণে তাকে পুরো সমর্থন জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবি গুলো তুলে ধরতো তবে, প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মত ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, স বাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই।

আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধা রণ জনগন, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসাথে কাজ করার আহব্বান জানাচ্ছি।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা ) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবীতে আমরা দীর্ঘদিনধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের মুগ্ধ করে ছে।

এমন দাবী ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দূর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্বব বলে মনে করি। তার এমন উদ্যোগ ও দাবীকে স্বাধুবাদ জা নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *