রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ ‘২০১৪ সালের পর আমি কোনো ভোট দেই নাই। আমাদের কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারকে মারে ফেলার পর আর ভোট দিতে যাওয়ার সাহস হয়নি।’
ভোট দিতে যাওয়ার প্রশ্নে এভাবেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের রায়পুর ইউনিয়নের ভোটার মাজেদুল ইসলাম।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের দিন রাতে রায়পুর ইউনিয়নের ছেপড়িকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে জবায়দুর হক নামে এক সহকারী প্রিজাইডিং অফি সারকে পিটিয়ে হত্যা করে নির্বাচন প্রতিহতকারীরা।
ওই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই এলাকার মানুষজন।
এদিকে, ঘটনার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও ক্ষত বহন করছে ছেপড়িকুড়া বিদ্যালয়টি।
সেই ঘটনার পর থেকে এই বিদ্যালয়টিকে আর কখনো ভোট কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
তবু, এখনো এই এলাকার ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে ভয় পান।
এখানকার কেউ প্রিজাইডিং বা পুলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নিতে চান না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়া এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি বা আমা র পরিচিত যারা এবার প্রিজা ইডিং বা সহকারী প্রিজা ইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন তারা কেউ রায়পুর বা এর আশেপাশের কোনো কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে চান না। হয়ত যার ভাগে পড়বে, তাকে বাধ্য হয়ে ইচ্ছের বিপরীতে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আলতাফুর রাজা বলেন, আমি কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে যুক্ত নেই। আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সাধারণ মানুষ।
২০১৪ সালের সেই ঘটনার পর থেকে আমি বা আমার পরি বারের ৮ সদস্যের কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাইনি।
কেনো যাবো ভাই, অযথা বিপদে পা বাড়াতে চাই না। যদি, কখনো ভোটের পরিবেশ ফিরে আসে তখন ভেবে দেখবো।
ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, একটা সময় ভোটের দিনে উৎসবের আমেজ থাকতো।
তবে, বর্তমানে সেই আমেজের জায়গায় আতঙ্ক স্থান নিয়ে ছে।
ভোট কেন্দ্রে গেলেই একটা ভয় কাজ করে, কেউ হঠাৎ করে হামলা করলো কিনা। তাই আর ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছি না।
একই এলাকার নতুন ভোটার সিহাব রায়হান বলেন, আমার বাসার কাউকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেখিনি।
ভোটের দিন আমাকে বাবা বাসা থেকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহবু বুর রহমান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটকেন্দ্রগুলো নিরাপদ রাখতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ভোটার যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন সে লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।