পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর:
গ্রীষ্মকাল বাবুই পাখিদের প্রজনন ঋতু। এই সময় এরা বাসা বাধেঁ। সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম।
কিন্তুু কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কেশবপুরে তালের পাতায় জড়ানো নিপুণ কারুকার্যে খচিত বাবুই পাখির বাসা।
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির ঝড়ে”।
কবি রজনীকান্ত সেনের এই কালজয়ী ছড়াই বাবুই পাখির এখন প্রধান অজানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন এখন আর দেখা যায়় না, তেমনি দেখা মেলে না ছড়ার নায়ক বাবুই পাখি অথচ আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরি র নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কষ্টকর।
প্রতিটি তালগাছে ৫০ থেকে ৬০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তাল গাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণী য়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না।
একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এরমধ্যে অনেক বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়ে ছে।
এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই দু’টি ফুল।
একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে।
বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয় ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়।
অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। বাবুই পাখির বাসার ভিতর আধুনিক যুগের মত লাইটের ব্যবস্থা আছে।
বাসার ভেতর একটু গোবর রাখা হয়, তার ভেতর জোনাকি পোকার মাথা টি ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে জোনাকির আলোতে বাসা আলোকিত হয়ে উঠে।
বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের গাছি আফছার আলী জানান, তাল গাছ কাটার সময় হলে তালগাছ কাটি আর খেজুর গাছ কাটার সময় হলে খেজুর গাছ কা টি। আমি গাছ কাটতে কাটতে বুড়ো প্রায়।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল।
কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। তালগাছ কেটে ফেলার ফলে বাবুই পাখির বাসা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মঙ্গলকোট গ্রামের গাছি জামাল উদ্দীন সরদার বলে ন, বলেন, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখি হত্যা বন্ধ ও পাখির বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভয় আশ্রম গড়ে তোলাসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দে শের প্রচলিত আইন প্রয়োগ কঠোর হওয়া জরুরী।
এখন আর আগের মতো গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে সেই তালগাছ, খেজুর গাছ যেমন দেখা যায় না তেমনি দেখা মিলে না বাবুই পাখি ও তার বাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *