রহমত আরিফ, ঠাকুরগাঁও : তীব্র শীতের মধ্যে কাজের আশায় ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন অনেক দিনমজুর‘

আমার কম্বল লাগবে না স্যার। কম্বল দিয়ে কি পেটের ক্ষুধা যাবে। শীতের চাইতে পেটের ক্ষুধার কষ্ট অনেক বেশি।

সবাই শুধু আসে আর একটা করে কম্বল দিয়ে ছবি তুলে নিয়া যায়। কিন্তু আমার বাড়িত সবাই যে না খায় আছে, সেই কথা কাকে বলমু।’

এবার শীতে ত্রাণের কম্বল পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এভাবেই নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরেন ঠাকু রগাঁও রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে রাত্রিযাপন করা দিনমজুর শফিকুল ইসলাম।

শফিকুলের পাশে রাত্রিযাপন করা দিনমজুর রকি ৭ দিন থেকে কোনো কাজ পাননি।

ইউসুফ নামের ৬২ বছর বয়সী অপর দিনমজুর টানা ৬ দিন কোনো কাজ না পেয়ে অনাহারেই শুয়েছিলেন।

ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার তো বয়স হয়ে গেছে। এমনিতে আমাকে কাজে কম নেয়।

তার মধ্যে এখন কাজও কম। ভাবছিলাম শরিলে শক্তি থাকতে কখনো হাত পাতবো না।

কিন্তু আরতো উপায় নাই। কালকে থেকে হয়তো ভিক্ষাই করতে হবে।’

প্রতি বছরেই শীত মৌসুমে ঠাকুরগাঁও ও এর আশপাশের অঞ্চলে কাজের সুযোগ কম থাকে।

তবে এবার শীতে দিনমজুরি কাজের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় আরও কমে গেছ।

এসময় অন্যান্য কাজের সুযোগ কমলেও বিভিন্ন ভবন নির্মাণের কাজ বেড়ে যেতো।

তবে এ বছরে সেসব কাজেরও দেখা পাচ্ছেন না দিন ম জুররা।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাকু রগাও জেলায় মোট ৩৩ হাজার ৪৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শুকনা খাবার ১ হাজার ৮৩৭টি প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া যায়।

পুরোটাই পাঁচটি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০ হাজার পিস কম্বলের জন্য এবং স্থানীয়ভাবে কম্বল কেনার জন্য ২০ লাখ টাকার চাহিদা

প্রেরণ করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথা সাধ্য চেষ্টা করবে জেলা প্রশাসন।

এই অঞ্চলের শীতার্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যে সরকা রি বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন ড. মনোতোষ কুমার দে।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলে শীতকালীন পরিস্থিতি এখানে বসবাসকারীদের জন্যে একটা বড় দুর্যোগ।

নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে যেমন পূর্ব প্রস্তুতি থাকে, এই অঞ্চলের শীত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগে থেকে সরকারের বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

এই অঞ্চলের শীতার্তদের সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে যারা এই সময়ে কোনো কাজ করতে পারছে না বা কাজ পাচ্ছে না তাদের জন্যে সরকার বিশেষ কিছু পরিকল্পনা করতে পারে।

এলাকার বৃত্তবান ও বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে আসার মাধ্য দিয়ে অসহায় মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো সহজ হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *