রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ কেউ রিকশা বা ভ্যানচালকের সন্তান, আবার কেউবা দিনমজুরের।
কিন্তু তাতে কি? গন্তব্যে পৌঁছাতে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের সামনে। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩৫ জন চাকরিপ্রার্থী। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত ১০টায় ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনসে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কয়েক হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৩৫ জনকে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ। কোনো প্রকার দালালি বা আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা। নির্বাচিত হতে পেরে অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশ সুপার এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ইতি আক্তার নামে চাকরি পাওয়া একজন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ১২০ টাকার বিনিময়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে চাকরি পাব। যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি।
তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না।
আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি টাকা দেব কীভাবে? কিন্তু মনের জোর এবং ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার স্যারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকায় আমি নির্বাচিত হয়েছি।
এজন্য আমি ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক স্যার ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
চাকরি পাওয়া পিতৃহারা এক প্রার্থী বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।
আমাদের তেমন কোনো সম্পত্তিও নেই। সংসার চালাতে গিয়ে আমরা খুব অভাব অনটনে আছি। আমি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি এবং কনস্টেবল পদের জন্য আবেদ ন করি।
পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছি, যা আমার জন্য একেবারেই স্বপ্নের মতো। আমার পক্ষে কাউকে ১০ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারপরও আমার বিশ্বাস ছিল আমার যোগ্যতায় আমি চাকরি পাব।পুলিশে চাকরি পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন এক প্রার্থী
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফ ট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। মেডিকেল পরীক্ষা শেষে তাদে র ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে।
জানা যায়, গত ৮ মার্চ প্রথম শারীরিক পরীক্ষা শেষে ৩০০ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। পরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৩৫ জন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আই জিপি) স্যার আমাদেরকে যে সিস্টেম চালু করে দিয়েছেন তা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। আমরা কোনো প্রকার তদবির তোয়াক্কা না করে যে সমস্ত প্রার্থীরা শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, যারা সকল পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে শুধু তাদেরকেই নির্বাচিত করেছি।
শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে মেধা ও যোগ্য তাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা সতর্ক ছিলাম।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল ধাপ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *