মামুন পারভেজ হিরা,নওগাঁ ঃ নওগাঁ মুলত বরেন্দ্র অঞ্চল অধ্যুষিত কৃষি প্রধান জেলা। এ জেলা ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত।

তবে অসংখ্য নদী, বিল, খালে র অস্থিত্ব থাকার কারনে মাছ উৎপাদনেও নওগাঁ উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে বিবেচ্য। সম্প্রতি আ ম এ জেলার অর্থকরী ফসল হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

অর্থনীতি এবং কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে এ জেলায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি নদী। তার মধ্যে অন্যতম নদীগুলো হচ্ছে আত্রাই নদী, ছোট যমুনা নদী, ফকিরনী নদী, শিব নদী,পূনর্ভবা নদী, নাগর নদী এবং তুলশীগঙ্গা নদী।

ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থেকে নওগাঁ জেলার রধামইরহাট উপজেলায় আত্রাই নদী প্রবেশ করেছে। জেলার অন্যতম বৃহৎ নদী এটি।

বাংলাদেশের ব্যপক পরিচিত নদ-নদীগুলোর মধ্যেও এই নদী উল্লেখযোগ্য। এই নদীর জেলার ধামইরহাট থেকে পত্নীতলা, মহাদেবপুর, মান্দা ও আত্রাইউপজেলা স্পর্শ করে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় প্রবেশ করেছে।

কালের মাছ উৎপাদনসহ কৃষি পন্য বিপনন এবং অন্যান্য ব্যবসা ক্ষেত্রে আত্রাই নদীর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। তবে কালের প্রবাহে নদীর প্রবাহ অনেক কমে গেছে। কেবলমাত্র বর্ষা মওসুমে এই নদীর প্রবাহ গতিশলি থাকে।

শুকনা মওসুমে প্রায় শুষ্ক হয়ে পড়ে নদী। এর ফলে বর্ষা মওসুমে ব্যপকভাবে নৌকা চলাচল করলেও শুকনা মওসুমে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

এই নদীতে বেশীর ভাগ এলাকায় মাঝে মাঝে চর জেগে উঠে।

জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন নদী হচ্ছে ছোট যমুনা। এই নদীটিও ভারত থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে।

দিনাজপুর থেকে আবার ভারত হয়ে বাংলাদেশের জয়পু রহাট জেলা হয়ে নওগাঁ জেলায় প্রবেশ করেছে।

জেলার বদলগাছি, নওগাঁ সদর, রানীনগর উপজেলা হয়ে আত্রাই উপজেলায় আত্রাই নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে।

এই নদী বিশেষ করে নওগাঁ শহরকে দুইভাগ করে বয়ে গে ছে। এই নদীর অবস্থা আরও শোচনীয়।

বর্ষকালে পানির প্রবাহ থাকলেও শুকনা মওসুমে প্রতি বছর পানি শুকিয়ে যায়। এই নদীতে বর্ষাকালে কিছুটা নৌকা চলা চল করলেও শুকনা মওসুমেএকেবারেই চলাচলের কোন সু যোগ থাকে না। এই নদীটি বিশেষ করে নওগাঁ শহর এলাকা য় ব্যপকভাবে দুষন এবং দখলের শিকার হয়েছে।

নদীরউভয় ধারে প্রভাবশালীরা দখল করেছে। তারা নদী দখল করে তাদের বাড়িঘড় এবংব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ছেন। এ ছাড়াও নদীর উভয়ধারের বাসিন্দারাতাদের বাড়ির প্রাত্যহিক ময়লা আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদীতেই ফেলে থাকে ন। এ ছাড়[াও জয়পুরহাট চিনি কলের বিষাক্ত গাদ প্রায় প্রতিবছরছেড়ে দেয়া হয় এই নদীতে ফলে নদীর পানি দুষিত করে তোলে। এর ফলে মাছএবং জলজ প্রাণী নিধন হয়ে থাকে প্রতি বছর।

নওগাঁ জেলা শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেকটি নদীর নাম তুলশীগঙ্গা। এই নদীও পার্শ্ববর্তি জয়পুরহাট জেলা থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে দিয়ে প্রবেশ করেছে। নওগাঁ সদর উপজেলাতেই আবরো ছোট যমুনা নদীতে প্রবেশের মধ্যে দিয়ে এই নদীর সমাপ্তি হয়েছে।

তবে ইতিমধ্যে এই নদীর প্রায় অংশ ভরাট হয়ে অস্থিত্ব
সংকটে পড়েছে। এই নদীতে কোন পানি প্রবাহ নেই।

কেবল কচুরিপানায় ভরে গেছে। সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে এই নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে ছোট যমুনা ন দীর সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

ফলে নদীর নিচের বাঁকী অংশ বন্ধ হয়ে পড়েছে । মান্দা উপ জেলার দক্ষিনাঞ্চলে নুরুল্যাবাদ এলাকায় আত্রাই নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে ফকিরনি নদী। বর্ষাকালে এই নদীর কিছুটা অস্থিত্ব অনুভুত হলেও শুকনা মওসুমে তা একেবারে মরে যায়। এই নদীও অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে।

ব্যপকভাবে গণ দখলের কবলে রয়েছে এই নদীও। এই নদীতে কোন নৌযান চলাচল কোনদিনও করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেমে যাওয়া পানির স্তর ঠেকানো আর প্রাকৃতিক পানির ব্যবহার বাড়াাতে দরকার টেকসই পরিকল্প না। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে এ অঞ্চলে প্রতি বছর আড়াাই থেকে ৩ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে যায়।

বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলা থেকে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলায় প্রবেশ করেছে নাগর নদ। দুপচাচিয়া উপজেলা থেকে রানীনগর, আত্রাই উপজেলার কিশা ইউনি য়নের সমসপাড়া এলাকায় আত্রাই নদীর সাথে যুক্ত হয়ে এই নদীর অস্থিত্ব বিলীন হয়েছে।

এই নদীও এক সময় ছিল খরস্রোত। এই নদীর পাশে অবস্থিত বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি পতিসর কাচারীবাড়ি।

এই নদী পথেই কবি বহুবার বজরায় চড়ে চলনবিল হয়ে শাহজাদপুর ও শিলাইদহ থেকে পতিসরে এসেছেন।

স্থানীয়রা জানান, জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সাতটি নদী।

এ ছাড়া রয়েছে ১২৩ বিল জলাশয়। এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সেচযন্ত্রের মাধ্যমে অন্তত ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়।

হাজারো মানুষের জীবিকার উৎস এসব নদী বিগত বছর গুলোতে চৈত্র বৈশাখ মাসে শুকিয়ে গেলেও এবার অন্তত ২ মাস আগেই এসব নদীর পানি ঠেকেছে তলানিতে।

জেলার সাধারন মানুষের দাবী নদীগুলো খনন করে অস্থিত্ব রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলে কৃষি, মৎস্য এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে আবারো গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে সক্ষম হতে পারে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফইজুর
রহমান বলেন, নওগাঁয় ৭টি নদ নদী রেেয়ছে। বেশিরভাগ নদ নদীতে পলি পরে ভরাট হয়েছে.নদী খননের জন্য নওগাঁ সহ ৬৪ জেলার ছোট নদী খাল জলাসয় পূর্নখনন প্রকল্পের দ্বীতি য় পর্যায়ে অন্তরভুক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পঅনুমোদন হলে নদী র নব্যতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নওগাঁর নদ নদীগুলো পূর্নখনন করা হবে এতে নওগাঁর কৃষিতে উন্নয়ন হবে এবং কৃষকরাও উপকৃত হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা অল্প পানি ব্যবহারের বিশেষ পদ্ধতির পরামর্শ দিচ্ছি মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার জেলার আত্রাই নদীর পা নি অনেক কম।

তাছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সামনে যদি বৃষ্টিপাত না হয়, তা হলে সমস্যা প্রকট হবে।

চলতি মৌসুমে নওগাঁয় এক লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

নদী ও বিলের পানি ব্যবহারে স্থাপন করা হয়েছে ১৯৬টি এলএলপি পাম্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *