আকিমুল ইসলাম  চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
সবুজ আর হলুদের মিতালীতে সেজেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন গ্রামের সরিষা ক্ষেত।
যেখানে রয়েছে দৃষ্টিজুড়ে হলুদের অপার সৌন্দর্যের সমা রোহ। এইসব সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকাল বেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধ করে তুলেছে।
জেলায় এক সময় আখ, পাট, মসুর ও গমের আবাদ বেশি হলেও কালের বিবর্তনে এগুলোর আবাদ কমে গেছে।
এ সব ফসলের জায়গায় অন্য ফসল জায়গা করে নিয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে চুয়াডাঙ্গায় সরিষার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা না হলে কৃষকরা সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন।
আমন ধান কাটার পর এই সময় জমি সাধারণত পড়ে থাকে। জমি ফেলে না রেখে কৃষকরা সরিষা আবাদ করে জমি কাজে লাগিয়েছেন।
সরিষা কর্তনের পর এই জমিতে আবার বোরো ধানের আবা দ করবে কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, আলম ডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজে লায় ৩১০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
জেলায় ২০২২-২৩ মৌসুমে তিন হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিলো।
জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দীন জানান, রোপা আউশ কাটার পর জমি ফেলে না রেখে তিনি ৫০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন।
শ্রমিক, সার ও সেচসহ জমি প্রস্তুত করতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে সরিষা ভালো হয়েছে।
তিনি আশা করছেন এ বছর প্রায় ১০ থেকে ১২ মন সরিষা পাবেন। বর্তমান প্রতি মন সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে। তিনি আশা করছেন, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় সরিষা বিক্রি করতে পারবেন।
বাড়তি সময়ে সরিষা বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যাবে।
জেলার জীবননগর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোরর্শেদ জানান, জেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সরিষা আবাদের জন্য কৃষকদেরকে আমরা নিয়মিতভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভীন জানা ন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় গত বছর ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হযেছিলো।
চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের জন্য বিভি ন্ন প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলার শতকরা ৭১ ভাগ সরিষার আবাদ হয়েছে এই উপজে লায়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি-১৪ জাতের সরিষা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক বিভা স চন্দ্র সাহা জানান, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি সরিষার আবাদ হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষা ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে। বিশেষ করে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে ধান ক্ষেতের মধ্যে সরি ষা বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয়। এতে করে কৃষক আমনের ফলন পায় ও সেখান থেকে কৃষক সরিষায়ও পেয়ে থাকে।
পরবর্তীতে ওই জমিতে কৃষক বোরো ধানের আবাদ করবে। তিনি আরো জানান, হেক্টর প্রতি সরিষার গড় উৎপাদন ১ দশমিক ৫ মেট্টিক টন।
সে হিসেবে তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার উৎপা দন হবে ৫ হাজার ২৭২ দশমিক ৫ মেট্টিক টন। উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল উৎপন্ন হবে দুই হাজার ১০৯ মেট্টিক টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *