রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ শীতকাল আর পিঠা একসূত্রে গাঁথা। কিছুদিন থেকে হালকা আকারে শীত শুরু হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শীতকালীন পিঠার দোকান।
প্রতিদিন বিকাল থেকে এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় জমছে মানুষজনের। বিক্রেতারা পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বা বসে বসে গরম গরম এসব শীতের পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। এ যেন শীতের আরেক ধরনের আমেজ।
ঠাকুরগাঁও শহর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়া-মহল্লায় স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন পিঠার দোকান।
শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, টার্মিনালের সামনে, আর্ট গ্যালারি মোড়, পোস্ট অফিসের সামনে, জজকোর্ট চত্বর, কলেজ মোড়, ঠাকুরগাঁও রোড যুব সংসদ মাঠ, বিভিন্ন হাটের রাস্তা বা এলাকায় এসব পিঠার দোকান বসেছে। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে এসব দোকানে।
রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকুরীজীবী, শিক্ষা র্থী সব শ্রেনী-পেশার মানুষ পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে আবার পিঠা খেতে দেখা যায়। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
পৌর শহরের নর্থ সার্কুলার সড়কের পাশের্^ বসেছে বেশ কয়েকটি ভাপা-পিঠার দোকান। সেখানকার পিঠা বিক্রেতারা বলেন, আমরা চালের গুঁড়া, ভর্তা আর প্লাস্টিকের পিরিচ সাজিয়ে দোকান খুলি।
পরে ভাপা-চিতুয়া ও অন্যান্য পিঠা বানিয়ে হটপটে ঢুকিয়ে রাখি। এরই মধ্যেই ক্রেতার ভিড় জমে গেলে সেখান থেকে বের করে তাদের সামনে পরিবেশন করি। পাশাপাশি সিদ্ধ ডিম, ডিম চিতুয়া ইত্যাদিও চলে বেশি।
এসব পিঠার দোকানে আসা হাজীপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ইয়া সমিন আরা বলেন, ছোটবেলার একটা সুখকর স্মৃতি হচ্ছে শীতের সকালে চুলার পাশে বসে ঝোলা গুড় মিশিয়ে চিতই পিঠা খাওয়া। গ্রাম থেকে শহরে এসে পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা ভর্তা।
তিনি জানান, যেহেতু এটা শীত মৌসুম বাসাবাড়িতে তো পি ঠা বানায় সেটার একটা স্বাদ আর এখানকার পিঠার মধ্যে স্বাদের বেশ পার্থক্য। বাসাবাড়ির পিঠায় সাধারণত আইটে মটা কম থাকে।
আর এখানে যে পিঠা তৈরি হয় বিশেষ করে এখানকার ভর্তার আইটেমটা অসাধারণ, চার-পাঁচটা আইটেমের ভর্তা থাকে সবগুলোই আলাদা আলাদা স্বাদের সবকিছু মিলে এখানে বসে পিঠা খাওয়ার চমৎকার একটা পরিবেশ মনে হয়।
শহরের নিশ্চিন্তপুর মহল্লার ফারহান আহমেদ বলেন, বাসা বাড়িতে পিঠা বানানো বেশ ঝামেলার। খেতেও তো ইচ্ছে। তাই কী আর করা। দোকান থেকেই কিনে খাই।
পথচারী জাহিদ ইকবাল জানান, তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসা য় ফেরার পথে দুটি চিতই পিঠা খান।

পুরো শীতকাল সন্ধ্যার নাশতা পিঠা দিয়েই সারেন। পাশ থেকে আরেকজন বলেন, ঘরে পিঠা বানানোর রীতি উঠে যাচ্ছে। সেটা পুষিয়ে দেয় রাস্তার পাশের এই দোকান গুলো।

শহরের কোট চত্ত¡রের পিঠা ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর হোসেন, এবার শীত শুরু হাওয়ার আগেই প্রচুর পিঠা বিক্রি হচ্ছে। বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়।
তবে রাতে পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই আয়ও এবার একটু বেশি হচ্ছে।
প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মত লাভ হচ্ছে। তবে তিনি চাল, চালের গুড়া, ডিম, চিনি, গুড়, জালানী দ্রব্যা দির দাম অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ায় বেশি লাভ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *