মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা।্
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো চার হাজার কেজি অপরিপক্ষ আম আটকের পর তা গাড়ির চাকায় পিষে নষ্ট করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসেনের উপস্থিতিতে এসব আম বিনষ্ট করা হয়।

এনিয়ে সাতক্ষীরায় শনিবার পর্যন্ত অপরিপক্ষ আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার সময় ৬০ হাজার ৮৪০ কেজি আম জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে।

গত ১৩ দিনে জেলা সাতক্ষীরা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভিযানে এই বিপুল পারিমান অপরিপক্ষ আম ধ্বংস করা হয়।

জানা যায়, শুক্রবার( ২৮ এপ্রিল) রাত ১০টায় পাটকেলঘাটা থানার
কুমিরা এলাকা থেকে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিকালে পিকআপ ভর্তি
রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো চার হাজার কেজি আম জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসন।

পরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসেন ভ্রম্যামান আদালত পরিচালনা করে গাড়ির চাকায় পিষে এসব আম নষ্ট করে ফেলেন। আমগুলো ধ্বংসের সময় পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ
আরাফাত হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে
অভিযান চালানো হয়।

নির্ধারিত সময়ের আগে আম পেড়ে তা রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছিল স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি। তবে ওইসব জব্দ করার সময় ব্যবসায়িদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এনিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় শনিবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত গত ১৩ দিনে অপরিপক্ষ আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার সময় ৬০ হাজার ৮৪০ কেজি আম জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভিযানে এই বিপুল পারিমান অপরিপক্ষ আম ধ্বংস করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১৩দিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৪০ কেজি, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার কেজি,কলারোয়া উপজেলায় ১ হাজার কেজি, দেবাহাটা উপজেলায় ২৮ হাজার কেজি, পাটকেলঘাটা থানায় ৪ হাজার কেজি, আশাশুনি উপজেলায় ২ হাজার কেজি ও শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার কেজি রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো আম নষ্ট করা হয়েছে। নির্দিষ্ঠ সময়ে আগে অপরিপক্ষ আম বাজারজাত করা রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সাতক্ষীরা জেলা আম রপ্তানীকারক সমিতির সভাপতি আলহজ্ব লিঢকত আলী বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়িরা অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ষ আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম জব্দ করে তা নষ্ট করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

সবমিলে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন।

উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যে ফলন হয়েছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো অপরিপক্ষ আম অভিযান চালিয়ে বিনষ্ট করা হচ্ছে।

সাধারণত কিছু অসাধু ব্যবসায়ি অপরিপক্ষ আমরা সায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তা প্রতিরোধে অভিযান চলমান রয়েছে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরার হিমসাগর ও ল্যাংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমের দেশে বিদেশে ব্যাপক চাহিদা সুনাম রয়েছে।

সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশব্যাপি বিস্তৃত। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ি অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ষ আম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকিয়ে সাতক্ষীরার আমের সুনাম নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

তারা এসব আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর চেষ্টা করছে। চলতি মাসের ১৬ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো ৬০ হাজার ৮৪০ কেজি আম বাজারজাত করার সময় ভ্রাম্যমামন আদালত পরিচালনা করে নষ্ট করা হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৬ এপ্রিল রোববার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা পশাসকের সম্মেলনে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আগামী ১২ মে সাতক্ষীরার সুস্বাদু গোবিন্দভোগ আম বাজারে উঠবে।

এসময় গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাত সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া বাগান মালিকরা ২৫ মে হিসাগর ও ক্ষীরশাপাতি, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন আ¤্রপালি আম গাছ থেকে নামাতে ও বাজারজাত করতে পারবেন বলে নির্দেশ দেওয়া হয়।

One thought on “পাটকেলঘাটায় ৪ হাজার কেজি অপরিপক্ষ জব্দ আম”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *