আকিমুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
অসহনীয় গরমে পুড়ছে দেশ। এ অবস্থায় দেশের গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপ প্রবাহ।
চলতি এপ্রিলের অন্তত ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, যা ২০১৯ সালের পুরো বছরের রেকর্ডের সমান।
আর দেশে এই গরমের প্রধান হটস্পট শুরু থেকেই চুয়া ডাঙ্গা।
চলতি মৌসুমে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ও আজ শনিবার ২৭ এপ্রিল ৪২ দশ মিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এই চুয়াডাঙ্গাতেই রেকর্ড করা হয়েছে।
বর্তমানে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড এ জেলাবাসীর কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত বিশ বছরের বেশি সময় ধরেই শীত-গরমে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়ে আসছে।
এর আগে, ২০১৪ সালের ২১ মে এই জেলার তাপমাত্রা সর্বো চ্চ ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার কথা জানা যায়।
যে চার কারণে চুয়াডাঙ্গায় গরম বেশি
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, ভৌগোলিক কারণে সাধার ণত চুয়াডাঙ্গায় গরমে তাপমাত্রা বেশি থাকে। আর শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে। ফলে গরমের সময় যেমন সর্বো চ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, তেমনি শীতের সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এই জেলায়।
চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ।
সেখানেও বিশাল এলাকাজুড়ে সমভূমি। আর সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয় ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত থাকে।
ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে সূর্য লম্বভাবে রশ্মি বা কিরণ দেয়।
ফলে প্রচুর গরম অনুভূত হয়। আর তাপের পরিবহন প্রক্রি য়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বায়ু চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অর্থাৎ গরম লু-বাতাস যখন চুয়াডাঙ্গার প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এ জেলার তাপমাত্রা অন্যান্য এলাকার চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে।
তাপমাত্রার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের মাঝ বরাবর অতিক্রম করেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। সূর্য থেকে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান বা সোলার পজিশন ঠিক এই কর্কট ক্রান্তি রেখার নিচে। সূর্যের উত্তরায়ণের কারণে তাপমাত্রা বাড়ে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যার কারণে সূর্যের তাপ বেশি পড়ে এই অঞ্চলে।
চুয়াডাঙ্গার আশেপাশে বড় কোনো জলাভূমি বা বনভূমি না থাকায় এ অঞ্চলে তীব্র গরম অনুভূত হয়। কারণ কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা নির্ভর করে ওই এলাকার ভূ-প্রকৃতি, সমু দ্র থেকে দূরত্ব, স্থলভাগ ও জলভাগের অবস্থান, বনভূমির অবস্থান ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপরে।
সর্বশেষ কারণ হলো চুয়াডাঙ্গাতে অতীতের তুলনায় গাছ পালা কমে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল সাবাড় করা হচ্ছে। এছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় গাছপালা কমে যাওয়ায় মূলত উষ্ণতা বাড়ছে।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াও অন্যতম কারণ। আর গর মের সময় জলাভূমির স্বল্পতার জন্য আদ্রতা ধরে রাখা যায় না। তাই বেশি গরম অনুভূত হয়।
তিনি আরো বলেন, এ বছর এপ্রিলের শুরুতেই প্রথমে মৃদু, তারপর মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ ছিল।
তারপর সেটা এখন তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রুপ নিয়ে তা চলমান রয়েছে।
গত কয়েকদিন ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এটা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২১ মে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেল সিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তবে এ বছর সেই রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গায় কেন এত গরম, জানা গেল যে কারণ