:শাহিন সোহেল:২০১৬ সালে ৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা শেষ করে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন মিনার। এক বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনায় তাঁর ডান হাত ও ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
বাঁ পায়ে আছে ১২টি লোহার দণ্ড।শরীরে এ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার হয়েছে মোট ১৯টি।
তবে মিনার কিন্তু থেমে যাননি। কৃত্রিম পা দিয়ে নতুন করে হাঁটতে শেখা মিনার ৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
হুইলচেয়ারে বসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ৩৬তম বিসিএসের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা (নন-ক্যাডার) সুপারিশপ্রাপ্ত মিনার বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মিনারের পুরো জীবন কাটছে একটার পর একটা যুদ্ধ জয় করে। পেশায় গাড়িচালক বাবা ক্যানসারে মারা যান ২০০৭ সালে।
বলতে গেলে টিউশনি করেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয় মিনারকে। এখন মানিকগঞ্জে স্ত্রী, সন্তান, মা আর এক ভাইকে নিয়ে মিনারের সংসার।
মিনার তাঁর জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বারবার মা রীনা আক্তার আর স্ত্রী খাইরুন নাসরিনের অবদানের কথা বলছিলেন। এই দুই নারী তাঁকে কখনো জীবনযুদ্ধে হারতে দেননি।
২০১৬ সালে মিনার যখন ৩৯ দিন আইসিইউতে ছিলেন, তখন এই দম্পতির বিয়ে হয়নি। তবে তাঁদের ভালোবাসার সম্পর্কটা সবাই জানতেন বলে খাইরুন সকাল থেকে শুরু করে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আইসিইউতে মিনারের পাশে থাকতেন। হাত নেই, পা নেই এমন একজনকে বিয়ে করতে চাইলে পরিবারের অনেকেই মত দেননি। তবে মেয়ের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে খাইরুনের মা-বাবা বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলেন।
মিনার তাঁর জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘যে হাত দিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম স্বপ্নের চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি, সেই হাত আমি দেখি না কত দিন! আহা, আমার ফুটবলপ্রিয় পা; দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল আলগোছে।
কিন্তু স্বপ্ন? হ্যাঁ, পুড়েছিল বটে, কিন্তু নিশ্চিহ্ন হতে দিইনি। আমার পরিবার, বন্ধু-পরিজন আর অজস্র মানুষের ভালোবাসাকে বুকে ধরে স্বপ্নের পথে হেঁটে গেছি আমি।’
ভালোবাসা সুন্দর কিন্তু সবার ক্ষেত্রে না।
মিনারের জীবন যুদ্ধের গল্গ