মুহা: জিললুররহমান, সাতক্ষীরা:
করসোল (টক আতা) গাছের ফল, পাতা ও ছাল খেলে ক্যান্সার নিরাময় হচ্ছে এই গুজব এখন দেশব্যাপী।
আর এই সুযোগে সাতক্ষীরার পতিপয় নার্সারী মালিক ৫০ টাকা দামের করসোল গাছের চারা এখন বিক্রি করছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। হুজুকে মাতাল ক্রেতারা লাইন দিয়ে সেই করসোল গাছের চারা কিনতে নার্সারীতে ভীড় জমাচ্ছে।
এদিকে করসোল নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্কতা মূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সাতক্ষীরার সোনালী নার্সারীর মালিক আতিয়ার রহমান বলেন, করসোল বা টক আতা গাছের চারা প্রায় সব নার্সারীতেই রয়েছে। এটা এমন নয় যে, নার্সারী গুলোতে পাওয়া যায় না। আগে আমরা করসোল গাছের একটি চারা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করতাম।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে মানুষ করসোল চারা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু সুযোগ সন্ধানী অসাধু নার্সারী মালিক ৫০ টাকার চারা বিক্রি করছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি চারা ৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।
অথচ করসোল বা টক আতা গাছের ফল, পাতা , ছালের রস খেলে মরনব্যাধি ক্যান্সার সেরে যাবে এর কোন ডাক্তারি বা বৈজ্ঞাকি ভিত্তি নেই।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত তথ্য নিয়ে দেশব্যাপী বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর গ্রা মের গাজী আশরাফ করসোল (টক আতা) গাছের ফল ও রস খেয়ে তার ক্যান্সার নিরাময় হয়েছে। শুধু তিনি নয়, তার পরিচিত আরো কয়েক জনের ক্যান্সার নিরাময় হয়েছে
এই গাছের ফল ও পাতার রস সেবন করে।
গাজী আশরাফের দাবি, ২০১১ সালে তিনি সঙ্গাপুর থেকে একটি করসোল গাছের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আঙ্গীনায় রোপন করেন।
কয়েক বছর আগে গাজী আশরাফ মরনব্যাধি (কিডনি) ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তিনি চিকিৎসাও শুরু করেন। কয়েকটি কেমো দেয়ার পর তিনি সব চিকিৎসা বন্ধ করে করসোল গাছের ফল,পাতা ও ছালের রস খেতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বেশ ভালো আছেন।
তিনি আরও বলেন, তার পরিচিত কয়েকজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগি করসোলের রস খেয়ে ভালো আছেন। তাদের আর চিকিৎসা নেয়া লাগছে না।
সম্প্রতি এ খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় নানা বিভ্রান্তি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য করসোলর পাতা সংগ্রহ করতে সাতক্ষীরার গাজী আশরাফের বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছে।
দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বিভিন্ন পরিবহনের করে আসতে থাকেন সাতক্ষীরা শহরে। মানুষের প্রচন্ড ভিড়ে এক পর্যায় গাজী আশরাফ তার বাড়িতে লাগানো গাছের পাতা অন্যকে দেয়া বন্ধ করে দেন। তখন শুরু হয় ব্যক্তি পর্যায় করসোল গাছের চারা কেনার হিড়িক।
আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু নার্সারী মালিকরা একটি করসোলের চারা বিক্রি করে কয়েকগুন টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করসোল গাছ নিয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু হওয়ার পর চিকিৎসক মহলের নজরে আসে বিষয়টি ।
এপ্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: সবিজুর রহমান জানান, করসোল গাছের ফল, পাতা বা ছাল খেলে ক্যান্সার সেরে যাবে এ তথ্যের কোনই ভিত্তি নেই। এটি ভিত্তিহীন এক টি খবর।
রিতিমত গুজব। যা রিউমার আকাওে ছড়িয়ে পড়েছে। করসোলের পাতা বা ফলের রসে ক্যান্সার সারে এ ধরনের কোন গবেষণা কোথাও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ক্যান্সার নানা ধরনের হতে পারে। এক রোগির সাথে অন্য রোগির সিমটমের তেমন কোন মিল থাকে না। বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া করসোল বা টক আতা গাছের ফল-পাতা-ছাল খেলে রোগির চরম ক্ষতি হওয়া সম্ভবনায় বেশি। গবেষণা ছাড়া এ ধরনের গুবজে কান না দেয়ার আহবান
এই চিকিৎসকের।
তিনি আরো বলেন, যে তথ্যটি প্রচার হয়েছে এটি অনেকটা
পানিপড়া খেয়ে ক্যান্সার সেরেছে এমন অবস্থার মত। বিধায়
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করসোল গাছের ফল, পাতা, ছাল খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন,সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস থেকে বুধবার (৫ জুলাই) বিকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রেসনোট দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয়, এ ধরনের গুজবে কান না দেয় ।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, কোন ক্যান্সার আকান্ত ব্যক্তি যদি এ ধরনের গুজবে কান দিয়ে তার নিয়মিত চিকিৎসা থেকে সরে আসে বা চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে রোগি মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এবষিয়ে সকলকে আরো সর্তক হওয়ার আহবান জানান।