নিজস্ব প্রতিবেদক,সাতক্ষীরা:
নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সংকটে ভুগছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর, খলিষখালী ও নগরঘাটা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

এসব সমস্যা সমাধানে ২০২১ সাল থেকে ওই সব এলাকায়
নিরাপদ খাবার পানি,স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, পরিস্কার পরিচ্ছ ন্নতা, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগে করনীয় বিষয়ে বিভি ন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কাজ করে আসছে স্থানীয় বেসর কারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ।

নেদারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে ও সিমাভীর সহযোগিতায় স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীদের সার্বিক সহযোগিতায় উত্তরণ নিউ এরিয়া ওয়াশ এসডিজি ওয়াই বাংলাদেশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অদ্য বধি ওনসব এলাকায় উল্লেখিত কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।

কার্যক্রম পরিচালনার সময় কমিউনিটির নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারী সেবা প্রদান কারীদের নিকট নিরাপদ খাবার পানি, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, রাস্তা মেরামত, ডাষ্টবিন স্থাপন, ময়লা যত্রতত্র না ফেলা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় উত্থাপিত হয়েছে।

যা অনেকাংশ পূরণ হয়েছে। কারণ সরকারী বাজেটের তুল নায় কমিউনিটির চাহিদা অনেক বেশী। তবে পর্যায়ক্রমে এই সকল চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

পূর্বের তুলনায় বর্তমানে ওই সকল খাতে বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে ছে এবং ভবিষ্যতে বাজেট আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তবে সরকারের প্রো-পুওর স্টাটিজি অনুসারে তালার বিভিন্ন এলাকায় এখনও অনেক পরিবার আছে যারা দরিদ্র এবং যাদের পক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে নিরাপদ খাবার পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন করা সম্ভব নয়।

এই সকল ক্ষেত্রে সরকারী বরাদ্দ একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়াও তালার জালালপুর এবং খলিশখালী ইউনিয়নে গভীর নলকূপ সফলতা পায় না। কারণ, পানিতে প্রচুর আয় রণ, আর্সেনিক এবং ইকোলাই থাকে।

তাই ওইসব এলাকার জন্য বিকল্পভাবে নিরাপদ খাবার পানি র জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা অতীব জরুরী।

ইতিমধ্যে সরকারীভাবে রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টারের (বৃষ্টিার পানি সংরক্ষন) মাধ্যমে নিরাপদ খাবারপানির ব্যবস্থা অব্যাহ ত রয়েছে।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মোঃ আব্দুল কাউয়ুম জানান, তাদের এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এখানেডি পটিউবয়েল সাকসেস হয় না।

টিউবয়েলের পানিতে প্রচুর পরিমাণেআ য়রণ, আর্সেনিক ও লবনাক্ততা রয়েছে।

উত্তরণ দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় হতদরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে এবংমানুষকে সচে তন করার পাশাপাশি বিভিন্ন এ্যাড ভোকেসী কার্যক্রম পরিচা লনা করে আসছে।

তারা মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে ছেন। তবে হার্ডওয়ার সার্পোট দিলে যেখানে ডিপ টিউ বয়েল সাকসেস হয় সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্য মে খাবার পানি সরবরাহ করলে এলাকার মানুষ আরও বেশী উপকৃত হত এবং নিরাপদ খাবারপানি পান করতে পারতো। তারা পানি বাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেত।

নগরঘাটার চকেরকান্দা গ্রামের জেবুন্নেছা, জলি বেগম, গাবতলী গ্রামের সামছুন্নাহার, বেড়াডাঙ্গী গ্রামের শংকর বিশ্বাস, খলিষখালীর দুধলী গ্রামের অনুপ সরকার, বয়ার ডাঙ্গা গ্রামের তাসলিমা বেগম, বাগডাঙ্গা গ্রামের ময়না

গোলদার,অসীমা ম-ল, উর্মিলা মন্ডল, জালালপুরের আটু লিয়া গ্রামের শাপলা বেগম, দোহার গ্রামের ডালিয়া সুলতা না,আটঘরা গ্রামের রিংকু দাশ, স্বপন ম-ল, আটুলিয়ার আয়শা বেগমসহঅনেকেই জানান, তাদের এলাকায় বৃষ্টির সময় ৫-৬ মাস জলাবদ্ধতা থাকে এবংলবণাক্ততার কারণে খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই।

প্রায় ২-৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার একড্রাম পানি ২০থেকে ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়।

বর্ষা মৌসুমে ভিটে-বাড়িতে পানি জমে থাকায় শৌচাগার ব্যবহারের মতো অবস্থা থাকে না।

আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চরক্ত চাপ, চুলকানি, পাঁচড়া, পেটেরপীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন এসব এলা কার মানুষ।

এছাড়া আর্সেনিকের কারণে এলাকায় অনেকের মৃত্যুও হয়ে ছে। উত্তরণ নিউ এরিয়া ওয়াশ এসডিজি ওয়াই বাংলা দেশ প্রোগ্রামের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন বলেন, প্রকল্প এলাকার মানুষের নিরাপদ খাবার পানি এবং স্যানিটে শন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য জনগণের চাহিদা অনুসারেআরও বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অত্র এলাকার খাবার পানি সংগ্রহ করা বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বড় ধরণের একটি কঠিন কাজ। এক কলস খাবার পানি সংগ্রহের জন্য ১ থেকে ২ কিমি দূরে যে তে হয়, দীর্ঘলাইনে দাঁড়াতে হয় এবং দিনের একটা বড় অং শের শ্রম ঘন্টা ব্যয় হয় এ কাজে।

এছাড়া অনেকেই বাধ্য হয়ে আয়রণ,আর্সেনিক, লবনাক্ততা ও ইকোলাইযুক্ত টিউবয়েলের পানি পান করে থাকেন। ফলে তারা পেটের পীড়া, আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানাবিধ
রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

তিনি আরও বলেন, উত্তরণ নিউএরিয়া ওয়াশ এসডিজি ওয়াই বাংলাদেশ প্রোগ্রামের ম্যাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানি পান করা,স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা, পরিস্কার পরি চ্ছন্ন থাকা, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করা,দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তু তি গ্রহণ, দুর্যোগের সময় ও পরবর্তী করনীয় বাল্যবি বাহে র কুফল এবং মানুষের প্রাকটিস লেভেল উন্নয়ন করার
কমিউনিটিকে সচেতনত করা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ন্যাপকিন কর্ণারস্থাপন ও ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের ওয়াশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাকটিস লেভেল উন্নয়ন করার জন্য কাজ করে আসছে।

এ ব্যাপারে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান,এলাকায় খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচা গারে র অভাবের পাশাপাশিআর্সেনিকের সমস্যা প্রকট।

ভয়াবহ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অত্রএলাকার কৃষ্ণকাটী গ্রামের একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি উত্তরণের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী কৌশিক রায় জানান, উপজেলার কয়েকটি এলা কায় লেয়ার না পাওয়ায় গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।

বিশেষ করে জালালপুর ও খলিষখালী ইউনিয়নে এ সমস্যা বেশি। কিন্তু ২০০ ফুটের বেশি গভীরে কিছু টিউব ওয়েল বসলেও এর বেশিরভাগ আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যা থেকে যাচ্ছে।

তবে নগরঘাটা এলাকার অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো। সেখা নে বেশিরভাগ এলাকায় ডিপটিউবওয়েল বসানো হচ্ছে।

তবে নিরাপদ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *