সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
জেকে বসেছে শীত। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার জনজীবন।

বিশেষ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃষ্টির পর জেলা জুড়ে শী তের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে সামর্থ্যবানরা শীত নিবারণ করতে পারলেও ভোগান্তি পোহাচ্ছে নি¤œ আয়ের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ।

শীত নিবারণে গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তাদের। যদিও ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাওয়া ৪১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

তবে সেটা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন
ভুক্তভোগীরা।

সাতক্ষীরা শহরতলীর পারকুখরালী এলাকার প্রাণসায়ের খালপাড়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন গৃহবধূ মলুদা বেগম।

দেবহাটা উপজেলার গবরাখালীর গ্রামে ছিল তার বাড়ি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে শহরের প্রাণসায়ের খালপাড়ে টং ঘরে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

একই এলাকার জবেদা বেগম জানান, আইলাদুগর্ত এলাকা আবাদন্ডীপুর গ্রাম থেকে সব হারিয়ে জীবন যাপন করছেন প্রাণসায়ের খালপাড়ে।

বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেই চলে তার সংসার। শীতবস্ত্র কেনার মতো সামর্থ্য নেই তার। আশপাশে ধনী মানুষের বসবাস থাকলেও কেউ ফিরে দেখে না তাদের।

পার্শ্ববর্তী বয়ারডাঙ্গা এলাকার কমল দাশি (৮০) বলেন, ‘শীতের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না।

তোমরা কেউ আমাকে একটা কম্বল বা শীতের কাপড় দিয়ে যাও বাবারা।

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার রিকসা চালক আব্দুল ওয়াজেদ জানান, গত বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড শীত পড়ছে। শীত নিবারণে প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নেই তার।

ফলে শীতে রিকসা নিয়ে বের হতে পারছি না। বের হলেও ইঞ্জিন ভ্যানে বাতাসে শীত বেশি লাগে বলে যাত্রীরা উঠতে চায় না। বেশিরভাগ যাত্রীরা ইজিবাইকে চলতে বেশি সাচ্ছন্দ
বোধ করছে।

যে কারণে আমাদের ভ্যানে যাত্রী হচ্ছে না। ফলে এই শীতে
আমাদের আয়রোজগার অনেক কমে গেছে।

একই এলাকার খালেদা বেগম বলেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ে র কাজ করে সংসার চালাই। শীতের কাপড় কেনার মত সমা র্থ নেই তার।

শীতে বৃদ্ধমাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। শুনেছি অনেকে কম্বল পেয়েছে। কিন্তু আমরা একটাও কম্বল পাইনি।

সাতক্ষীরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন,জেলায় প্রায় ৪৫০টির মতো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও রয়েছে।

এসব এনজিওর পরিচালকদের সাতক্ষীরার দরিদ্র মানুষের শীতবস্ত্র সহায়তায় এগিয়ে আসার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে শীতবস্ত্র বিত রণে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দুই ধাপে ৪১ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের উচ্চমান সহকারী বাবলু হোসেন।

সাতটি উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তাদের অনুকূলে সেগুলো পাঠানো হয়েছে বিতরণ করার জন্য।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় মোট কম্বল এসেছে ৪৪ হাজার ১০০টি।

এর মধ্যে ৭টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬শত এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে ২ হাজার ২শত। স্টকে আছে ৩শত কম্বল।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূইয়া বলেন,আমরা ৭ হাজার ৩০০ কম্বল পেয়েছিলাম। প্রচন্ড শীতের জন্য অসহায় মানুষের কথা ভেবে সবগুলো কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছি।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মক র্তা মোঃ রনি আলম নুর বলেন, আমাদের উপজেলায় বরা দ্দকৃত সকল কম্বল বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের
মাধ্যমে বিতরণ সম্পন্ন করেছি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলে ন, অনেক আগেই বরাদ্দকৃত কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছি।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, শীতের শুরুতেই অর্থাৎ কম্বল পাওয়া মাত্রই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম শেষ করেছি।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিন বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাওয়া সকল কম্বল আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ সম্পন্ন করেছি।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন,
শীতকে কিছুটা হলেও প্রতিহত করতে ট্যাগ অফিসারদের মাধ্যমে শীতের শুরুতেই কম্বল বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, কম্ব ল পাওয়া মাত্রই আমরা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ট্যাগ অফি সারদের সম্মুখে বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, ইতিমধ্যে তারা কমিশনারদের মাধ্যমে দুস্থ অসহায় মানুষের মধ্যে এক হাজার কম্বল বিতরণ সম্পন্ন করেছেন এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে/উদ্যোগে ১২৫ ০টা কম্বল কেনা হয়েছে।

যেটি আসছে রোববার বিতরণ করা হবে। তিনি সবাইকে আহবান জানান যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেটা দিয়ে অস হায় মানুষের পাশে
দাঁড়ানোর জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *