বিশেষ প্রতিনিধি : কৃষক সবজি উৎপাদন করলেও সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারছে না। ভোক্তা পর্যায়ে সবজি পৌঁছাতে বদল হচ্ছে কয়েক হাত। এ হাত সে হাত হতে হতে কৃষকের ১০ টাকার সবজি ৫০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসকে সামনে নিয়ে দাম বাড়াতে প্রস্তুত মধ্যস্বত্বভোগীরা।
কৃষক রহমাত আলী বুধবার যশোরের সাতমাইল বাজারে এক কেজি বেগুন বিক্রি করেছেন ১৫ টাকা। সাতমাইল থেকে ৪কিলোমিটার দূরের বাজার চুড়ামনকাটি। সেখানে ভোক্তা আমজাদ আলী এক কেজি বেগুন কিনেছেন ৩৫ টাকায়। আর এর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যশোর শহরের বড় বাজারে ক্রেতাদের ভালো মানের এক কেজি বেগুন হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। আর এই বেগুন ঢাকাতে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ কেজিতে। এভাবেই পাইকারি বাজারে কৃষক স¯ত্মায় সবজি বিক্রি করেন, আর শুধু হাতবদলেই খুচরা বাজারে তার দাম পাঁচ গুণ পর্যšত্ম বেড়ে যায়।
যশোরে কৃষকদের হাত থেকে মধ্যস্বত্বকারিদের হাত বদলে, ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি কিনবে। এরপরে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রাজধানীর স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা সবজি নিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করনে।
বুধবার (১৫ মার্চ) খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায়, যশোরে কৃষকদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বকারি ব্যবসায়ীরা বেগুন কিনছে ১৫ টাকা কেজি, সেই বেগুন ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছে ৩৫ টাকা। শসা যশোরে ২০-২৫ টাকা কেজি, সেই শসা ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি, যশোরে কাঁচা মরিচ ৬০-৭০ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছে ৯০ টাকা কেজি, যশোরে লেবু পিস ৫টাকা ৫পয়সা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছে ৭-৮ টাকা পিস, টমেটো মানভেদে যশোরে ৮-১০ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছে ১৫ টাকা কেজি দরে, যশোরে পেঁয়াজ ১৮ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মানভেদে কিনছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যশোরে পটল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মানভেদে কিনছে ৫৫-৫৭ টাকা, লাউ যশোরে ৩৫ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মানভেদে কিনছে ৪০-৪২ টাকা, যশোরে পেঁপে ১৮ টাকা, ঢাকা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মানভেদে কিনছে ২২-২৫ টাকা কেজি।
যশোরের সবজি ব্যবসায়ী মোহম্মদ নিশাত বলেন, পাঁচ টনের এক ট্রাক সবজি যশোর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিতে ট্রাকভাড়া ২০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ার আগে যার ভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। সবজি প্যাকেজিং, গ্রেডিং করে ট্রাকে ওঠানো-নামানোর জন্য যে শ্রমিকের দৈনিক মুজরি ছিল ৩০০ টাকা, তাদের এখন দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা খরচ বেড়েছে। এজন্য যশোরে তুলনায় ঢাকার বাজারে সবজির দাম বেশি।
দাম বেশির কারণে জানতে চাইল বড় বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা জাফর ইকবাল বলেন, পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে দামে পাথর্ক্য আকাশ-পাতাল তফাত। কারণ পরিবহন, শ্রমিক খরচ, এরপরে আড়তদারিতে লাভ করতে হয়। তারপরেও কাঁচা সবজি নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে কৃষক পর্যায় থেকে ক্রেতা পর্যšত্ম আসতে যেয়ে সবজি মাঝপথে দাম বেড়ে যাই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) যশোরের প্রতিনিধি আব্দুর রকিব সরদার বলেন, কৃষদের সম্মিলত ভাবে সংগঠন তৈরি করতে হবে। আর এই সংগঠনের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি সরাসরি বাজারজাত করতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব পরবে না। এতে কৃষক ভালো দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে।