আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদে ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এএও) এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে কৃষি প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। গত ২০ মার্চ সোমবার কৃষি প্রণোদনা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা মৌখিক অভিযোগ করেন। ভুয়া কৃষক ও কৃষকের স্বাক্ষর জাল করে তারা প্রণোদনার সার-বীজ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে (আউশ প্রণোদনা) বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। গত ২০ মার্চ সোমবার উপজেলার প্রায় চার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি পটাশ ও ৫ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ দেয়া হয়েছে। কিন্ত্ত তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের কারনে অবস্থা সম্পন্ন এবং (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনা পেলেও প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছে। আবার একই পরিবারের একাধিক সদস্য প্রণোদনার কৃষি উপকরণ পেয়েছে। কতিপয় কৃষি কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করে (ভুয়া) কৃষকের তালিকা করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন অধিকাংশ (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনার উপকরণ পেয়ে বাজারের এক সার ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে সরকার মহতী উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে।
কৃষকদের অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারের দেয়া সহায়তা থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি এখানে দায়িত্ব নেবার পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ডালপালা মেলেছে। এদিকে কৃষি কর্মকর্তার কাছে প্রণোদনার কৃষকের তালিকা চাইলে তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে এসব কৃষকের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করলেই তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিপুর্বে উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন পেয়াঁজ চাষের জন্য ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই ধাপে মোট ১৫০ জন কৃষককে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০ টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কষক প্রতি নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা করে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং কৃষক প্রতি উপকরণ ২ হাজার ৪৪৯ টাকা করে মোট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্ত্ত সেখানেও কৃষি কর্মকর্তা নানা অনিয়ম করেছেন। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উপকারভোগী একাধিক কৃষকের অভিযোগ, প্রণোদনার তালিকায় কৃষক নয় এমন ব্যক্তিসহ স্বজনপ্রীতি, এবং অল্প কিছু কৃষককে নামেমাত্র প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। তারা বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের প্রণোদনার প্রকল্পে যেখানে কৃষক প্রতি বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ২৪৯ টাকা। বরাদ্দের টাকা কৃষকদের বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রতিটি কৃষককে বিকাশে ২৮০০ টাকা করে পাঠানোর কথা থাকলেও তালিকার অনেক কৃষক সে টাকা পায়নি। আর তালিকায় নেই প্রকৃত কৃষক। কৃষকরা বলছেন, বরাদ্দের বাকী ২৪৪৯ টাকার মধ্যে বালাইনাশক বাবদ ২১০০ টাকা, নায়লন সুতলি বাবদ ১৫০ টাকা, অন্যান্য খরচ বাবদ ১৪৪ টাকার ভাউচার প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে কৃষককে দেওয়া হয়, ৫০০ টাকার পলিথিন, ৮০ টাকার বালাইনাশক (৫০ গ্রাম অটোষ্টিন), ৪৫ টাকার সুতলি। প্রতিটি কৃষক পায় ৬২৫ টাকার মালামাল। বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা বলেও কৃষকেরা মনে করছে। এদিকে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কীটনাশক ব্যবসায়ী বলেন, কৃষি প্রযুক্তি মেলা আয়োজনের জন্য সরকারিভাবে দুলাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু তার পরেও প্রতিটি কীটনাশক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আনুঃপাতিকহারে চাঁদা আদায় করা হয়। অথচ তারা দায়সারা আয়োজন করে অতিথিদের নাস্তাও ছিল নিম্নমাণের যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনকি উপজেলার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এছাড়াও অফিস সময় মেনে অফিস না করা ও বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনীতে নানা অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, আমি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অথচ কৃষি প্রযুক্তি মেলায়
আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি এটা শুধু আমাকে নয়, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের সকলকে অবজ্ঞার সামিল। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। তিনি বলেন, কেউ সুবিধা না পেলেই নানা অভিযোগ করেন। এবিষয়ে রাজশাহী উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।