বিশেষ প্রতিনিধি:প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।
অনেকেই এমন গতিতে একটি দেশের অগ্রগতি চায় না। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (১২ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের জেলা শাখার নেতাকর্মীরা গণভবনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর পরিশ্রমের কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অতি দরিদ্রের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকার দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্যের হার আরো দুই বা তিন শতাংশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে আরো গতিশীল করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কোনো অতি দরিদ্র থাকবে না। সরকার বিনা খরচে বাড়ি প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং দেশবাসীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ সবকিছুই করছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করে জনগণের কল্যাণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা চাই আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হোক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। কারণ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্বৈরশাসকের পকেট থেকে গঠিত হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো দল মাটি ও মানুষের দল নয়। ১৪ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে।
পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পেলেও বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বলে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা ও তাদের সমমনাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা কোনো উন্নয়ন দেখছে না। তারা প্রতিদিনই এমন কি রমজানের দিনেও উচ্চকণ্ঠে মিথ্যা কথা বলছে। কেন তারা এমন করছে আমি তা বুঝতে পারছি না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সরকার জনগণের জন্য কাজ করেছে আর এ কারণেই জনগণ তার দলকে ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনো ভোট কারচুপির প্রয়োজন নেই।
কারণ আমরা সবসময় জনগণের সেবা করে তাদের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় আসি। আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আসে না। যারা নির্বাচনের কথা বলছে, তারা বন্দুকের মুখে ক্ষমতায় এসেছে। তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি, এ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২৯ আসন। বিএনপি এখনো তাদের আগের অবস্থানে অটল রয়েছে। অথচ দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করে আওয়ামী লীগ তার অবস্থানকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে বাবা-মা, ভাইসহ সর্বস্ব হারানোর পর তিনি দেশবাসীকে নিজের কাছের মানুষ ভেবে তাদের জন্য কাজ করছি।
দেশের জনগণই আমার পরিবার। আমি যা কিছু করেছি তা মানুষের জন্য করেছি। সবকিছু হারিয়ে দেশে ফিরে আসার পর আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা (দলের লোকজন) আমার পাশে থাকলে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে পারব।
এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে থাকে, সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে সব সময় কাজ করে। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্তের নেতৃত্বে বৈঠকে নেতারা বলেন, দেশে চাকরি, নিয়োগ, পদোন্নতির মতো সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয়েছে। তারা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় রীতি পালন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি উপস্থিত ছিলেন।