রহমত আরিফ ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ প্রথম বারের মতো মরুর ফল রকমেলন মালচিং পদ্ধতিতে মাটিতে চাষ করে সফল হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের যুবক কৃষি উদ্যোক্তা মুন্নাফ আলী মণ্ডল।

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলতলা এলাকায় রেল লাইনের পাশে সুগার মিলের জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন এই ফল। এতে ভালো ফলন ও দামে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

রকমেলন ফলটি স্থানীয়দের কাছে তেমন পরিচিত না হওয়ায় ও স্থানীয় পর্যায়ের এর বাজার না থাকায় প্রথম দিকে ফল বিক্রয়ে তাকে ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে এখন ব্যবসায়ীরা খেত থেকেই তার এই ফল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে।

‘রক মেলন’ ফলটিকে অনেকেই আবার ‘সাম্মাম’ নামে জানেন। ‘রক মেলন বা সাম্মাম’ মূলত সৌদি আরবের মরু অঞ্চলের ব্যাপক চাষ হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় এর চাষ হচ্ছে।

সরজমিনে দেখা যায়, রেল লাইনের পাশে সবুজ গাছের লতাপাতায় দোল খাচ্ছে হলুদ ফুল আর গাছের নিচে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের রকমেলন ফল।

ঠাকুরগাঁওয়ে শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মুন্নাফ আলী মণ্ডল। তেঁতুলতলা এলাকায় ভাতারমারি ফার্মের পশ্চিম পাশে ৭৫ শতাংশ জমিতে ‘রক মেলন’ চাষ শুরু করেছেন। তিনি একজন ভালো ও অভিজ্ঞ তরমুজ চাষি হলেও তরমুজের পাশাপাশি এবার এই মরুর ফল চাষ করেছেন।

ইউটিউব দেখে মালচিং পলিথিন ছিদ্র করে এর ফাঁকে ফাঁকে বীজ বপন করেন তিনি। বপনের মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ‘রক মেলন বা সাম্মাম’ ফল কেটে (হারভেস্ট) বাজার জাতকরণ করছেন। ফলে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি এখানে কাজ করে ৮-১০ জন নারী পুরুষ পেয়েছেন আয়ের উৎস।

মাত্র ৬০-৭০ দিনের মধ্যে এই ফলন ও দাম ভালো পেয়ে খুশি এই কৃষি উদ্যোগক্তা। ৭৫ শতাংশ জমিতে রকমেলন চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই আড়াই লাখ টাকা ফল বিক্রয় করেছেন তিনি।

খেতে কাজ করে তাদের সংসারও ভালো চলছে বলে জানান স্থানীয় নারী শ্রমিক কৌশলা। এর আগে কখনো এমন ফল দেখেননি ও খাননি বলে স্থানীয়রাসহ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফসলের মাঠে।

দেখতে আসা আলতাফুর রহমান নামে দর্শনার্থী বলেন, রকমেলন ফলটি আগে কখনো সরাসরি দেখিনি ও খায়নি তাই বউ-বাচ্চাকে নিয়ে এখানে দেখতে আসলাম। দেখ ও ফলটি খেয়ে ভালই লাগল।

স্থানীয় কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, মুন্নাফ এর রকমেলন খেত দেখতে আসছি। দেখে ভালই লাগল। চিন্তার করছি আগামীতে আমিও এর চাষ করব। এছড়াও আশেপাশের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

রাজধানীতে এর চাহিদা থাকায় খেত থেকে রকমেলন ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে দেড়শটাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রয় করনে বলে জানান ব্যবসায়ী উজ্জ্বল।

কৃষি অধিদপ্তরের মতে, এটি মরুভূমির ফল হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া ও মাটির সঙ্গে ভালোভাবে অভিযোজিত। স্থানীয় পর্যায়ে এটির বাজার তৈরি হলেও এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ভোরের ডাককে জানান, রকমেলন ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ফল। এটি একটি লাভজনক ফসল ও এর দামও ভালো। তাই রকমেলন চাষে মুন্নাফ আলী মন্ডলকে পোকা-মাকড় দমন রোধসহ সকল প্রকার সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *