পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ
পাইকগাছার সরল বাজারস্থ জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ সদস্যদের জমাকৃত সঞ্চয় ও বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ফেরত দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা।
সোমবার সকালে শত শত নারী-পুরুষ সমিতি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এমন অভিযোগ করেন সমিতির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রায় ৩ থেকে ৪শ’ সদস্যের সমিতির নিকট কয়েক কোটি টাকা প্রাপ্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, অত্র উপজেলার প্রতিষ্ঠিত সমবায় সমিতির মধ্যে জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি অন্যতম। সমিতিটি তাদের গতিশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করে ফেলে।
যার ফলে এলাকার শত শত মানুষ সমিতির বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এলাকার এমন কোন পরিবার নাই যে পরিবার সমিতির ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী ডিপিএস প্রকল্প নাই। এছাড়া সমিতির এফডিআর প্রকল্পে অসংখ্য মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে।
এই দুই প্রকল্পে বর্তমানে ৩ থেকে ৪শ সদস্যের কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা রয়েছে। যার বেশিরভাগ প্রকল্প মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরের মাসেই সদস্যের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা।
অথচ মাসের পর মাস কারো কারো ক্ষেত্রে বছর পার হয়ে গেলেও জমাকৃত টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এভাবেই শত শত মানুষ প্রতিদিন তাদের প্রাপ্য টাকা নিতে সমিতি কার্যালয়ে আসে।
কিন্তু সমিতি কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে না পারায় সবাইকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন সমিতির গ্রাহক ও সদস্যদের মাঝে অসুন্তুষ্ঠি বিরাজ করে আসছে। বান্দিকাটী গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, সমিতিতে আমার ১ হাজার টাকার দুটি বই রয়েছে।
দুটি বইতে ৬০ হাজার করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সমিতির নিকট দুটি বই থেকে ৮৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আমার প্রাপ্য। অথচ সমিতি কর্তৃপক্ষ আমার টাকা ফেরত না দিয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নানা তালবাহানা করে আসছে। ক্ষুদ্ধ এলাকার শত শত নারী পুরুষ সোমবার সকালে পৌরসভার সরল বাজারস্থ সমিতির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এতে সমিতি কর্তৃপক্ষ অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ খবর জানতে পেরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এদিকে সাধারণ সদস্যদের চাপের মুখে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী গাজী ও নির্বাহী সম্পাদক কাউন্সিলর আলাউদ্দীন গাজী আগামী ৬ মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল সদস্যদের পাওনা টাকা ফেরত দিবেন মর্মে অঙ্গীকার করলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয় বলে জানান মৎস্য আড়ৎদারী সমবায় সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেন সমিতির ক্ষুদ্ধ সদস্যরা। এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী গাজী জানান, করোনাকালীন পরিস্থিতির কারণে সমিতি বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দীর্ঘ এই সময়ে সমিতির বিপুল পরিমান টাকা মাঠ পর্যায়ে অনাদায়ী থেকে যায়। এর মধ্যে সমিতির টাকা নাই বলে অনেকেই গুজব ছড়ায়। এর ফলে সব সদস্যরা একসঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য চাপ দেওয়ায় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন।