মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
মিষ্টি তৈরির প্রধান উপকরণ দুধের ছানা। আর এই ছানা তৈরী হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং আসল দুধ পরিমানে কম দিয়ে অনুমোদনহীন গুড়ো দুধ দিয়ে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ছানা তৈরির কারখানা। যেখানে প্রশাসনের লোকজনের কোন তদারকি নেই।

এসব কারখানাগুলোতে আসল দুধের পরিমান কম দিয়ে গুঁড়ো দুধ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয় ঘি, ছানা ও এক প্রকার আঠা। উপজেলার গাজীর বাজার সংলগ্ন শুধু রাকড়া গ্রাামের অবৈধ ভাবে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে ছানা তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানা।

এসব কারখানা গুলোতে দেদারছে ব্যবহার হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর অনুমোদনহীন গুঁড়ো দুধ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল। গরুর গোয়ালে নোংরা পরিবেশে তৈরি করা এসব ছানা যাচ্ছে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, মাগুরা যশোরসহ আশপাশের এলাকার নামী দামী মিষ্টির হোটেলগুলোতে।

সরোজমিন উপজেলার কোলা ইউনিয়নের রাকড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে হঠাৎ এ এলাকার ঘোষ সম্প্রদায়ে মানুষ ছানা তৈরির কারখানার দিকে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অনেকে পেশা পাল্টে ছানা তৈরির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় ৫/৬ টি ছানা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। যে কারখানাগুলো গোয়ল ঘরের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

রাকড়া গ্রামের গোবিন্দ ঘোষের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি তার বাড়ির গোয়াল ঘরের কারখানাটিতে আসল দুধের অস্তিত্ব খুবই কম থাকলেও অনুমোদনহীন গুড়ো দুধ দিয়ে চলছে ছানা তৈরীর কাজ।

গোয়াল ঘরের চালে ঝুলছে অপরিষ্কার কাপড়ে মোড়ানে ছানা। পাশেই নর্দমায় যাচ্ছে সেই দূষিত পানি। দুর্গন্ধে সেখানে থাকা ছিল কষ্ঠকর।

গোবিন্দ ঘোষের বাড়ির পাশেই তার ভাই জয়দেব ঘোষ বাড়ির গোয়াল ঘরে গড়ে তুলেছে মিনি ছানা তৈরীর কারখানা। তিনি দাবি করেন, গুঁড়ো দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করেন না। স্থানীয় ঘোষদের নিকট থেকে দুধ সংগ্রহ করে সেই দুধ দিয়ে ছানা তৈরী করে। তবে কারখানাটিতে দুধের পরিমান কম থাকলেও গুড়ে দুধের পরিমান কিন্তু কম না।

একই গ্রামের বাবলু ঘোষের কারখানায় গিয়ে দেখা মেলে গুঁড়ো দুধ এবং ছানা তৈরীর বিষাক্ত কেমিক্যালের অস্তিত্ব। তিনি বলেন, সব সময় গুঁড়ো দুধ ব্যবহার করা হয় না। আমন নামের এক প্রকার ১ কেজি গুঁড়ো দুধের সাথে ১ কেজি আসল দুধ দিয়ে ২ কেজি ছানা তৈরি করা যায়।

এতে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, গাভীর দুধ দিয়ে এক কেজি ছানা তৈরি করতে নূন্যতম ৫ কেজি দুধের প্রয়োজন হয়। এতে মুনাফা কম হয়।

গাজীর বাজারে আরেকটি বড়সড় কারখানার মালিক সত্যজিৎ ঘোষ, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে বাড়ির গোয়ল ঘরে ছানা তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে। যে কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, মশা, মাছির, গরুর মল, মূত্রের মধ্যে এবং নোংরা পানি দিয়েই ছানা তৈরী করে এই অঞ্চলের নামী-দামী মিষ্টির হোটেলে বিক্রিয় করে আসছেন।

তিনি বলেন, গুঁড়ো দুধ গুলো ক্ষতিকর। গুঁড়ো দুধ ব্যবহার করে ছানা তৈরি করে বিক্রি করা ঠিক না। আর আসল দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করলে সেই হিসাবে দাম কম পাওয়া যায় না। তাই গুঁড়ো দুধ ব্যবহার করে ছানা তৈরি করতে হয় তাদের। ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহারের কথা জিজ্ঞাসা করলে কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে থাকেন।

কোলাবাজারের মাইধরপুর রোড়ের পাশে বনের ভিতরে আরেকটি অবৈধ ছানা তৈরীর কারখানার সন্ধান মেলে। কারাখানাটি ৪/৫ বছর আগে স্থাপন করেন মাগুরা জেলার বাঘাট এলাকার রিপন ঘোষ। তার কারখানায় সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছানা তৈরীর দুধের ভিতর মশা মাছিতে ভর্তি হয়ে গেছে। ময়লা পানির ভিতর ছানা ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। যে পানি দিয়ে অতিরিক্ত দূর্গন্ধ বের হচ্ছে।

তিনিও বিষাক্ত কেমিক্যাল ও আসল দুধের পরিমান কম দিয়ে অধিকাংশ গুড়ো দুধ দিয়ে নোংরা পরিবেশে তৈরী করছেন ছানা, ঘি এবং এক প্রকার আঠা। যে আঠা তৈরীর কোন অনুমোদন নেই। এই আঠা ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায বিক্রি করে থাকেন। এসব কারখানার মালিকগন বৈধ্য কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন-আল-আজাদ বলেন, কারখানা গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করে ছানা তৈরি করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুড়ো দুধ দিয়ে ছানা তৈরী, অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করলে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যে সহযোগীতা লাগে আমি করবো।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, নোংরা পরিবেশে, গুড়ো দুধ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে ছানা তৈরির কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার সচেতন মহলের কঠোর নজরদারিতে বন্ধ হবে এসকল অবৈধ কারখানা এমনটি প্রত্যাশা করেন সাধারন মানুষ।

One thought on “কালীগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নকল দুধের ছানা”
  1. কালীগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে নকল দুধের ছানা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *