চৌগাছা প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছার কৃতি সন্তান ব্যারে স্টার উজ্জলের মা জননী মোছাঃ মনোয়ারা খাতুন  তার (সাফল্য ও অদম্যতায়) শ্রেষ্ঠ জয়িতা  ( সম্মাননা ) পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি বেগম রোকেয়া দিবসের শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার  গ্রহন কালে উপস্থিত সকলের সামনে তার পরিবার জীবনের স্মৃতি তুলে ধরেছেন ।

তিনি বলেন আমার বাবা আমাকে কখনো স্কুলে পাঠায় নাই। আমি লেখাপড়া জানি না তবে ছোট বেলা থেকে লেখা পড়ার প্রতি খুব ইচ্ছে ছিল।

একটু বড় হলেই আমার বাবা আমাকে বিয়ে দেয় এক কৃষি পরিবারে, আমার স্বামীও লেখা পড়া জানে না।

বিয়ের ২ বছরের মাথায় আমর শ্বশুর মাত্র ১৫ শতক জমি দিয়ে সং সার থেকে আমাদের আলাদা করে দেই। আমরা মাটির ঘরে থাকতাম।

আমার স্বামী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করতো মা ঝে মধ্যে অন্যের জমিতে কাজ করতো। সংসার ভাল ভাবে চালাতে পারতো না। আমার প্রথম সন্তান মেয়ে, আমলিমা ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অভাবী সংসার ওর বাবা ওকে ভাল করে চিকিৎসা করাতে পারে নাই।

এত অভাবের মধ্যে আমি মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতাম ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য। আমার বড় ছেলে লাল্টুর ছোট বেলায় একটা দূর্ঘটনায় বাম পায়ে বড় রকমের সমস্যা য় ওর স্কুলে যেতে দেরি হয়।

যে কারণে আমার বড় ও ছোট ছেলে উজ্জ্বল ২ বছরের ছোট বড় হলেও এক ক্লাসে পড়তো। পরে পায়ের অপারেশন হওয়া ই আরো পিছায়ে যায়। যে কারণে বড় ছেলের আগে ছোট ছেলে লেখা পড়া শেষ করেছে। আমার ছোট মেয়ের নাম জেসমিন।

ওরা সবাই খুব কষ্ট করে লেখা পড়া করেছে। ওদের বাবা ওদেরকে লেখা পড়ার খরচ ঠিক ভাবে দিতে পারি নি।

ছেলেরা স্কুল কলেজে লেখা পড়া করা কালিন সুযোগ পাইলে বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতো।

আমাদের আশেপাশে স্কুল না থাকায় আমার ছোট ছেলে উজ্জ্বল আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৪ মাইল হেটে মাড়ুয়া স্কুলে যেতো ওখান থেকে ফার্ষ্ট ডিভিশনে এসএসসি পাশ করে।

আমার ছোট ছেলে যখন এসএসসি পাশ করলো তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমার ছেলে একদিন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার হয়ে আসবে।

ছোট ছেলের এসএসসি পাশের পর ওর বাবা ওর আর কোন খরচ দিতে পারেনি। এরপর নিজে টিউশনি করে চলতো।

আমরা কোন রকম বড় ছেলে ও মেয়ের লেখা পড়ার খরচ দিতাম। পরে আমার ছোট ছেলে এইচএসসি তে স্ট্যার নাম্বার পেয়ে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করে এবং চৌগাছা থানার ফার্স্ট হয়।

আমাদের আর্থীক সমস্যা ওর স্কুল কলেজের শিক্ষকরা জান তেন ও স্কুল- কলেজে বিনা বেতনে লেখা পড়া করেছে।

এইচএসসি পাশ করার পর মনে হচ্ছিল আর্থীক সংকটে আর সামনে যেতে পারবে না।

ওর বাবা ধান বিক্রি করে কিছু টাকা দেয় তাই নিয়ে রাজ শাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে আইনে চান্স পাই।

চান্স পাওয়ার প্রথম দিকে টাকার অভাবে চলতে পারছিলো না, তার সলুয়া কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর কবির বিষয়টি জানতে পেরে আমার ছেলেকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করতে থাকে।

পরে আমার ছেলে টিউশনি করে সেখানে লেখা পড়ার খরচ চালিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা পড়া শেষ করে।

ওর লেখা পড়া শেষে আমরা চেয়েছিলাম ও চাকরি করুক কিন্তু তার ইচ্ছা সে সুপ্রিম কোর্টের এ্যডভোকেট হবে।

অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট হয়ে নিজ উপার্জন ও তার চেম্বারে সহযোগিতায় আজ লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারী পা শ করে এসেছে।

আর আমি যে ইচ্ছে থাকার স্বত্তেও ছেলের একটা ভাল ড্রেস কিনে দিতে পারি নাই, ছেলের টাকায় এখন যশোর থেকে ঢা কা বিমানে যাতায়াত করি।

আমার অন্য ২ ছেলে মেয়েও লেখা পড়া শেষ করেছে, আ মার ছোট ছেলে উপার্জন করতে শিখলে ওদের আর কোন সমস্যা হয় নাই।

উল্লেখ্য,আজ শনিবার (  ৯ ডিসেম্বর) সকালে উপ জেলা পরিযদের হল রুমে বেগম রোকেয়া দিবসের শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠানে যশোরের চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা সভাপতিত্ন করেন।

এ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সরকারী কমিশনার ভূমি গুঞ্জন বিশ্বাস,ব্যারেস্টার উজ্জ্বল হোসেন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভা পতি সহকারী অধ্যাপক মোঃ কামরু জ্জামান, সাধারণ সম্পা দক তমিজ উদ্দীন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আন জুমান আরা মাহমুদা প্রমূখ।

এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, থানার অফিসার ইনচার্জ জি ল্লাল হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোদাব্বির হোসেন অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাও. মোঃ আব্দুল লতিফ, আইনজীবী তজিবর রহমান, প্রেসক্লাব চৌগাছার সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ইয়াকুব আলী, সাধারণ সম্পা দক শাহানুর আলম উজ্জ্বল, সহকারী অধ্যাপক আবুল কা লাম আজাদ ও মনিরুজ্জামান, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভা পতি মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা, তথ্য সৈনিক আশারফ হোসেন, শিক্ষক সেঁজুতি নূর প্রমূখ।

এ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রভাষক নাজমা আক্তার শিমু।

আলোচনা সভা শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা সফল জননীর সাফল্য ও অদম্যতায় কুটালিপুর গ্রামের মোছাঃ মনোয়ারা খাতুনকে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানে ভূষিত করেন। এ সময় সাথে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

One thought on “শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার গ্রহনকালে ব্যারেস্টার উজ্জলের মা যা বললেন !”
  1. শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার গ্রহনকালে ব্যারেস্টার উজ্জলের মা যা বললেন !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *