ডেস্ক নিউজ:ইউক্রেন যুদ্ধে দুই পক্ষ আবারও নতুন করে উত্তেজনায় জড়িয়েছে। এ নিয়ে আবারও নতুন মোড় নিয়েছে যুদ্ধ। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বেজেই চলেছে সাইরেন।
অপরদিকে হামলা হয়েছে ক্রেমলিনে পুতিনের বাসভবনেও। এদিকে তুরস্কে হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি ক্রেমলিনে পুতিনের বাসভবনের কাছে একটি ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণে কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে এমন হামলা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ক্রেমলিনে হামলার জন্য রাশিয়া ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের দায়ী করেছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘তারা (পশ্চিমারা) ইউক্রেনের বৈধ সরকারকে ধ্বংস করেছে, দুঃসাহসী ও দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
এখন ওই ইউক্রেনীয় দস্যুদের অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে তারা (পশ্চিমারা)। তাদেরকে তারা যেকোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের অনুমতি দিয়েছে এবং দায়মুক্তির অনুভূতি জাগিয়েছে। এছাড়া তাদের রাজনৈতিক আবরণ এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে।’
বুধবার রাশিয়া বলেছে যে ইউক্রেন দু’টি ড্রোন দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেছিল। যেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ওই হামলায় পুতিন আহত হননি। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়া উপযুক্ত সময়ে এ হামলার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা ওই হামলায় কিয়েভের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়া পুনরায় হামলা চালানোর বাহানা খুঁজছে।
এদিকে এই হামলায় কোনোরকম জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সিএনএনকে বলেন, ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ মিথ্যা কথা বলছেন।
আমি বলতে চাচ্ছি, এটি স্পষ্টতই একটি হাস্যকর দাবি। এ হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না… আমি আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে পারি যে এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ভূমিকা ছিল না।
হামলার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি বৈধ এবং আইনানুগ সামরিক লক্ষ্যবস্তু কিনা জানতে চাইলে কিরবি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এখানে আইনি আলোচনায় আসা দরকার। আমরা এমন হামলাকে সমর্থন করি না। আমরা এ বিষয়টিকে উত্সাহিতও করি না। কোনও নেতাদের ওপর আক্রমণ করতে আমরা সহযোগিতাও করি না।
গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ বহুমুখী মোড় নিলেও চলতি বছর তা অনেকটা বাখমুতকেন্দ্রিক ছিল। বাখমুতের লড়াই নিয়েই প্রকৃতপক্ষে ব্যস্ত ছিল দুই পক্ষ। তবে ক্রেমলিনসহ রাশিয়ার ভেতরে কয়েকটি হামলার কারণে রাশিয়া আবারও ইউক্রেনের বিভিন্নস্থানে হামলা শুরু করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটকে রাশিয়া নিশ্চিত করেছিল যে জেলেনস্কিকে হত্যার কোনও অভিপ্রায় তাদের নেয়।
সে কথা বেনেট জেলেনস্কিকেও জানিয়েছিলেন। শুরু থেকেই রাশিয়ার কর্মকাণ্ডেও সেটি প্রমাণিত হয়েছে। কিয়েভে বহু হামলা হলেও জেলেনস্কির সরকারি বাসভবনে কোনো হামলা হয়নি।
কিন্তু এখন অনেকটা সেই কথা থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। এখন তারা সরাসরি জেলেনস্কিকে এবং তার সরকারকে নির্মূলের কথা বলছে। পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং তার প্রশাসনকে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।
বর্তমানে মেদভেদেভ রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক বিশ্লেষক তার এ আহ্বানকে জেলেনস্কিকে হটানোর হুমকি বলে মনে করছেন।
বুধবার দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনকে শারীরিকভাবে নির্মূল করার কোনো বিকল্প নেই। তাদেরকে সরিয়ে দিতে হবে।
এদিকে তুরস্কে পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অব দ্য ব্ল্যাক সি ইকোনমিক কোঅপারেশন (পিএবিএসইসি) এক সম্মেলন চলাকালে রাশিয়ার একজন প্রতিনিধির মুখে কিলঘুষি মারেন ইউক্রেনের একজন এমপি। বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় এই অধিবেশন চলাকালে ঘটনাটি ঘটে।
এই অধিবেশনে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। তারা অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও সামাজিক খাতে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করতে আঙ্কারায় একত্রিত হন। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত পিএবিএসইসির সদস্য। কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পিএবিএসইসি কাজ করছে।
তুরস্কের মধ্যস্ততায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রফতানিতে সম্মত হয় রাশিয়া। এর মেয়াদ কয়েকদফা বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন করে এমন ঘটনায় সেটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ যেন নতুন মোড় নিয়েছে। কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রফতানি বন্ধ হলে, রাশিয়া সরাসরি জেলেনস্কিকে লক্ষ্যবস্তু করলে এবং হামলা তীব্র আকার নিলে সব হিসেব-নিকেশ উল্টে যেতে পারে।