আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার সান্তাহারে এক এগ্রোফুড কারখানার মালিক হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটের রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মান করে যাওয়া আসার রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাস্তা কেটে নির্মান করা ড্রেন দিয়ে তাঁর বশাল কারখানার পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও দুষিত ব্যর্জ নিস্কাশন করছেন প্রভাবশালী মিল মালিক।

মিলের ছাই জাতীয় বর্জ্যয়ে দ্ররুত ভরাট হয়ে গেছে শ্বশানের সামনে দিয়ে প্রবাহিত স্বচ্ছ পানির ইরামতি খাল। পানি অভাবে শ্মশানে সৎকার কার্যক্রম বন্ধপ্রায়। সান্তাহার পৌর শ্মশান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী রতন মুখার্জী বলেন, এখন শুধু সুইপার ও শ্মশান পাশের অতি দরীদ্র হিন্দু পরিবার অর্থাভাবে মাঝে মধ্যে তাদের মৃতদেহের সৎকার করেন অতি কষ্টে।

তিনি বলেন, শ্মশান সংলগ্ন খালের উপড় থাকা রেলব্রিজের উত্তর দিকে হাল্কা পরিমানে জমে থাকা পচা ও দুর্গন্ধ যুক্ত দুষিত পানি কলসে বা ছোট ড্রামে করে বহন করে এনে মৃতদেহের গোসল ও সৎকার কাজে থাকা মৃতদেহের স্বজনের গোসল কার্যক্রম করতে হয়।

এতে করে তাদের ত্রাহী অবস্থা হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে পচা পানি ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টরা আক্রান্ত হন চর্মরোগে। তিনি আরো বলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লাশের সৎকারে প্রচুর পরিমানে স্বচ্ছ পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানির অভাবে সান্তাহার শহর ও আশপাশের গ্রামের সচ্ছল হিন্দু পরিবার প্রায় অর্ধ যুগ পুর্বে ওই শ্মশানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

তারা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এবং তীব্র যানজট মাড়িয়ে যায় পাশের নওগাঁ শ্বশানে। এতে খরচ হয় ও অনেক বেশি। এতে করে সান্তাহার পৌর শ্মশানটি এখন পরিত্যক্তপ্রায় অবস্থায় চলে গেছে। এর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার অভাবে বাধ্য হওয়া অতি দরীদ্র পরিবার কাঁধে করে খড়ি ও সৎকার সামগ্রী নিয়ে যায়। এই এগ্রোফুড় কারখানার ড্রেনের কারনে শ্মশান পরিত্যক্তপ্রায় হওয়া ছাড়াও কাঁচা ড্রেন পাশের আবাদী জমির আমন, বোরো ও সরিষা আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে জানান পাশের কোমলদোগাছি গ্রামের গৃহবধু জুলেখা বেগম (৪০), মক্কে, ও রাজাজাক।

জানাযায়, সান্তাহার পৌরসভা শহর ও শহর সংলগ্ন বড় আখিড়া, কোমলদোগাছি, সান্দিড়া, কাশিপুর ও পৌরসভা এলাকার তারাপুর গ্রামে কয়েক হাজার হিন্দু সম্প্রদায় হরিজন মানুষ বসবাস করেন। স্বাধীনতার পর থেকে এসব হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃতদেহ সান্তাহার পৌর এলাকার নামা পৌঁওতা রেলব্রিজের নিকট স্বচ্ছ পানিতে টইটম্বুর ইরামতি খাল পাড়ে উন্মুক্ত ভাবে দাহসহ সৎকার কার্যক্রম সম্পাদন করা হতো।

এভাবে চলার এক পর্যায়ে প্রায় ২০ বছর পুর্বে পৌরসভা ও শ্বশান পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে শ্মশানে চুল্লি, স্ফাপন, মৃতদেহ ধোয়ার পাকা ঘর, বৈঠকখানা ও কালী মন্দির স্থাপনা নির্মান করা হয়। তখন থেকে শহর ও সংলগ্ন গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা অল্প সময় ও অর্থ ব্যয়ে ওই শ্বশানে তাদের সম্প্রদায়ের মৃতদেহের সৎকার কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছিল।

একপর্যায়ে শ্মমানের পৃর্বপাশে হাফেজ বেলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বুসরা অটোমেটিক রাইস মিল, বুসরা এগ্রো ফুড এবং কৃ.বা অটোমেটিক রাইস মিল নামের বিশাল বিশাল কারখানা নির্মান করেন। কারখানায় সৃষ্ট পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এবং বর্জ্য নিস্কাশনের জন্য শ্মশানে যাতায়ের একমাত্র রাস্তা মিটারগেজ রেলসড়কের ঢালের গোড়া কেটে ইরামতি খাল পর্যন্ত ড্রেন নির্মান করে। ফলে শ্মশানে যাওয়া আসায প্রতিবন্ধকতা হয় বলে পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ দাবী করেন।

নির্মান করা ড্রেনের স্থান ছিল শ্বাশানে মৃতদেহ ও খড়িসহ সৎকারে প্রয়োজণীয় মালামাল বহনের ভ্যান চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তা। ওই কারখানা মালিক হাফেজ বেলাল হোসেন ওই কাঁচা রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মান করে শ্বশানে চলাচল বন্ধ করে দেয়। কারখানা মালিক বড় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হবার কারনে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তবে সুইপার জনগোষ্টির নেতৃবৃন্দ পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুকে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন।

তিনি সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও অদ্যবধি কোন সুরাহা হয়নি। এবিষয়ে সুন্দরী অটো রাইস, বুশরা ও নিউ বুশরা এগ্রোফুড এবং কৃবা অটোমেটিক রাইস মিল কারখানার মালিক হাফেজ মোঃ বেলাল হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, ড্রেন করেছি তো প্রায় এক যুগ আগে রেলওয়ের জায়গা দিয়ে। একারনে শ্মশানে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এই কথাটা কেউ আমাকে জানায়নি। আমি কারো ক্ষতি করে ব্যবসা করতে চাই না। ড্রেন পাশের জমির মালিকারা তাদের ক্ষতির কথা জানানোর পর আমি অনেক দুর পর্যন্ত ড্রেন পাকা করে দিয়েছি। অবশিষ্ট কাঁচা অংশ অচিরে পাকা করে দেব। শ্মশান কমিটির নেতৃবৃন্দ আমার সাথে দেখা করে তাদের সমস্যার কথা জানালে আমি তাদের সমস্যাও সমাধান করে দেব।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *