আন্তর্জাতিক ডেস্ক:দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিভেদ ভুলে বৈঠক করেছেন ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো আলোচনা করলেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই তিক্ত ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো আলোচনা করেছেন।

সৌদি আরবের আল-এখবারিয়া টিভি এই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও সম্প্রচার করেছে। ওই ভিডিওতে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানকে চীনে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত মাসেই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবার বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর সেই বৈঠকও হয়েছিল চীনে।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সেবছর সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে নাটকীয় অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছে। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই অনেক বেশি ছিল।

ইরান ইয়েমেনে শিয়া হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে। ২০১৪ সালে হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি-সমর্থিত সরকারকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করে এবং এর জেরে সৌদি আরব পরের বছর থেকে হুথিদের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী বিমান অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে।

একইসঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে হুথিদের হামলায় সহায়তার অভিযোগও করেছে সৌদি আরব।

সৌদি আরব ২০১৯ সালে তার তেল স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার পাশাপাশি উপসাগরীয় এলাকায় ট্যাংকাগুলোতে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে এসেছে। যদিও বরাবরই ইরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

এছাড়া ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবে আন্তঃসীমান্ত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে উভয় দেশ এগিয়ে আসায় এখন সেই উত্তেজনা কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিবিসি বলছে, উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে পূর্ববর্তী অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে গত মাসে চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি ও ইরান দুই মাসের মধ্যে একে অপরের দেশে দূতাবাস পুনরায় খুলতে রাজি হয়। একইসঙ্গে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সতর্কতার সাথে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সৌদি ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্ততার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *