সুভাষ দাশ তপন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে আরেক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মখন মিয়ার ইজারাকৃত বালু মহাল থেকে রাতের আধারে বালু উত্তোলন করে পাচারের অভিযোগে এনে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাজী মখন মিয়া।
সোমবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের হাজী মখন মিয়া কতৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজী মো. মখন মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন,  ২০২১ সালে ২৪ মে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিলি কা বালু কোয়ারী ইজারা সংক্রান্ত সভায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে আমার নামে লাংলিয়াছড়া, পুটিয়াছড়া ও ফুলছড়া বালু কোয়ারী ইজারা প্রদান করা হয়।
ইজারা প্রাপ্তির পর মোট দরের ২৫% সরকারের রাজস্ব জমা দিযে নিয়ম অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিযে বালু উত্তোলনের জন্য বাকি টাকা প্রদান সাপেক্ষে অনুমোদন প্রদান করা হয়। আমি ইতোমধ্যে পরি বেশের ছাড়পত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্রের জন্য আবেদন করেছি, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তারপর সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বাকি ৭৫% প্রদানের পর বালু উত্তোলনের অনুমোদন পাবো। তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও জানান, গত ৮ জুলাই, ২০২৩ বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপ জেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের জনৈক মো. মনির মিয়া আমাকে জানান, আমার ইজারাকৃত পুটিয়াছড়া থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাতের অন্ধকারে শ্রীমঙ্গল শহরের জালালিয়া সড়কের বাসি ন্দা মো. ইউসুফ আলী বালু উত্তোলন করে রাতে অথবা ভোরে অন্যত্র পাচার করে আসছেন।
খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ঘটনাটি আমার সিলিকা বালু কোয়ারী পরিচালনাকারী মো. ফুল মিয়া মহালদার কে বিষয়টি জানাই। যেহেতু আমি একজন বয়োঃবৃদ্ধ মানুষ, সে হেতু আমার ব্যবসার কিছু অংশ মো. ফুল মিয়া মহালদার আমার পক্ষে পরিচালনা করে আসছেন।
গত ৮ জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মো. ফুল মিয়া মহালদার তাঁর নিজস্ব ফলদ বাগান থেকে শ্রীমঙ্গল শহরে ফেরার পথে সাইটুলা গ্রামে যান।
সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান,  ইউসুফ আলী সাহেবের আত্মীয় জালাল, কামাল, হারুন, সালাম, আলাল, সাজিদ, মাসুক, জুয়েল, সজীব, মোশাহিদ, সোহেল প্রমুখরা অন্যান্য শ্রমিক নিয়ে পুটিয়াছড়া থেকে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ অবস্থায় ফুল মিয়া মহালদার তাদেরকে বাধা প্রদান করিলে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ ফুল মিয়া মহালদারের গাড়িতে হামলা চালায় এবং তাকে প্রহার করতে থাকে।
তাকে রক্ষার্থে এলাকার শহীদ মিয়া ও মনির মিয়া এগিয়ে আসলে উল্লেখিত ব্যক্তিরা তাদের উপরও হামলা চালায় এবং দুজনেরই মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
শহীদ মিয়াকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফুল মিয়া মহালদার আহত অবস্থায়আত্মরক্ষার্থে দ্রæত গাড়ি নিয়ে শহরের দিকে চলে আসেন।
হাজী মখন মিয়া তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, আপনা র অবশ্যই অবগত আছেন যে,  মো. ইউসুফ আলী দীর্ঘ ৮/১০ বছর যাবত একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে তাঁর নিজস্ব লোক জনদেরকে নিয়ে সবগুলো ছড়া থেকে সরকা রের রাজস্ব ফাকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করে আসছেন।
এখন তিনি বৈধভাবে ইজারাকৃত ছড়াগুলো থেকেও রাতের অন্ধকারে জোরপূর্বক বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন।
অবৈধ বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে গিয়ে ইউসুফ আলীর লোকজনের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আমার ব্যবসা পরিচালনাকারী মো. ফুল মিয়া মহালদারসহ আরও দুজন। এতকিছুর পরও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানারকম অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
হাজী মো. মখন মিয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, এ ঘটনা র পর আমরা শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এখন নপর্যন্ত আমাদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমার জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে ইউসুফ আলী বলেন, ’তারা নিজেরাই ইজারার ৬৪ লাখ টাকার রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে অনুমোদন ছাড়াই বালু উত্তোলন করে আসছে’।
তিনি বলেন, ‘এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এজন্য তিনি তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথাও জানান। সংবাদ সম্মেলনে ফুল মিয়া মহলদারসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *